কথায় আছে, ‘একে রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর’। বিগত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বুকে হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে আরও এক নতুন ভাইরাসের প্রকোপ রীতিমতো চিন্তায় ফেলল চিকিৎসকদের। মাঙ্কিপক্স। চলতি মে মাসেই ইউরোপ এবং আমেরিকার বেশ কিছু দেশে দেখা গিয়েছিল এই রোগের প্রাদুর্ভাব। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে, গবেষকদের উদ্বিগ্ন করে তুলল এই রোগ। কিন্তু এই মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) আদতে কী?
মাঙ্কিপক্স মূলত ভাইরাসবাহিত একটি রোগ। যা স্মলপক্স গোত্রের ভাইরাস। ১৯৭০ সালে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল এই বিরল রোগটিকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি একটি বানরের শরীরে দেখা গিয়েছিল এই রোগের প্রকোপ। সেখান থেকেই এই ভাইরাসের এহেন নামকরণ। তবে বানরের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়, এমনটা নয় একেবারেই। এই রোগ বায়ুবাহিত। পাশাপাশি ছোঁয়াচেও বটে। অনেকটা স্মলপক্স বা চিকেন পক্সের মতো সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেও ছড়িয়ে পড়ে মাঙ্কিপক্স। এমনকি যৌন সঙ্গমের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস।
৭০-এর দশকের পর থেকে আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কয়েকবার মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব হলেও, বিশ শতকে এই মহাদেশের বাইরে সেইভাবে ছড়ায়নি রোগটি। ২০০৩ সালে প্রথম আমেরিকায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মানুষ। বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে আসার পরই ছড়িয়েছিল এই রোগ। তারও প্রায় কুড়ি বছর পর আবার পৃথিবীর বুকে ত্রাস সঞ্চার করল এই বিরল ভাইরাস। এবার যেন প্রকট হয়ে উঠল তাঁর ছোঁয়াচে সত্তাও।
কিন্তু কতটা বিপজ্জনক এই রোগ? এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় ২০-২৫ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। তাঁদের সকলের ক্ষেত্রেই মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। ফলে, এখনও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলেই অভিমত চিকিৎসকদের। যদিও মাঙ্কিপক্সের কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে ইতিপূর্বে। স্মলপক্সের ক্ষেত্রে শরীরে যেমন গুটি জন্ম নেয়, এক্ষেত্রেও সারা শরীর জুড়ে দেখা যায় ফোসকার আধিক্য। সেইসঙ্গে জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে টান, পিঠের যন্ত্রণার মতো উপসর্গও দেখা যায় মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে। আর চিকিৎসা?
না, এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি জানা নেই গবেষকদের কাছে। সংক্রমণের ১৪-২১ দিনের মধ্যে রোগী নিজেই সেরে ওঠেন এই রোগের ক্ষেত্রে। তবে মহামারীর আশঙ্কা এড়াতে ইতিমধ্যেই স্মলপক্স ও চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন মজুত করা শুরু করে দিয়েছে ব্রিটেন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি। চিন্তিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ না নিলেও, আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে চাইছে ‘হু’। নয়া আমদানি হওয়া এই ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ‘হু’ ডাক দিয়েছে জরুরি বৈঠকের। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসক ও ভাইরোলজিস্টরা। এখন দেখার করোনা মহামারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে আরও এক অতিমারীর আশঙ্কাকে কতটা প্রতিহত করতে পারেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor