মেঝেতে আঁকা আছে আলপনা। ওপর থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে একের পর এক চিঠি। আলপনার ওপর পড়ে আছে একটি দেহ। শ্যামলা, তীক্ষ্ণ, একা এক নারী। তাঁর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ছে আরও দশটা মুখ। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে সহচর। বেজে উঠছে গান, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানকে এভাবেই নতুনভাবে আমাদের সামে হাজির করালেন মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়। এই লকডাউনের আবহেই সোশ্যাল সাইটে মুক্তি পেল তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘মনে রেখো’। যে সিনেমার হাত ধরে থাকলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, এবং কাদম্বরী দেবী।
বাংলা সাহিত্য, চলচ্চিত্র হোক, বা সাংস্কৃতিক আড্ডা— নানা সময় ঠাকুরবাড়ির এই দুজন মানুষ আলোচনায় এসেছেন। কিন্তু এদেরকে তো অন্যভাবেও দেখা যায়! কাদম্বরীর একাকিত্ব, তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে দূরে চলে যাওয়া- এই সব নিয়ে আলোচনা হলেও তা অত্যন্ত কম। কাদম্বরীর আত্মহত্যা ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাকে যদি সম্পূর্ণ অন্য আঙ্গিকে সামনে আনা যায়? আর তার সঙ্গেই যদি যোগ করা হয় কবিতা ও গানের কোলাজ? ঠিক সেটাই করেছেন মৃগাঙ্কশেখর। মূলত ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের কাজ করলেও সিনেমা তৈরি নিয়েও তাঁর উৎসাহ। নিজের দর্শন, নিজের ভাবনাকে পর্দায় নিয়ে আসতে চান তিনি। ‘মনে রেখো’ সেই ভাবনারই ফসল।
তবে ছবিটি তৈরির যাত্রাটি মধুর ছিল না। মূল সমস্যা ছিল আর্থিক। কথাপ্রসঙ্গে মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় প্রহরকে বলছিলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর গানের কোলাজ তৈরি করে একটা ছবি বানাব। সেই সঙ্গে মাথায় এসেছিল কাদম্বরী দেবীও। এবার করতে গিয়ে দেখলাম আমাদের যা প্রাথমিক বাজেট, তাতে এমন পিরিয়ড ড্রামা করা সম্ভব নয়। অত সামর্থ্য তো নেই। সেই অনুযায়ী চিত্রনাট্যেও বদল আসতে থাকে। আস্তে আস্তে একটা সাধারণ ক্যামেরা নিয়ে শ্যুট শুরু করলাম। প্রথম থেকেই ভাবনা ছিল যেরকমভাবে সবাই দেখে আসছে কাদম্বরীকে, সেরকমভাবে নয়। একটু নতুন ভাবে, আরেকটু গভীরে গিয়ে ব্যাপারটাকে দেখা। সেটা করারই চেষ্টা করেছি। সেই সূত্রেই একটা গল্প এসেছে, এসেছে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা।”
উল্লেখ্য, হায়দ্রাবাদ লিটারারি ফেস্টিভ্যাল ২০১৯-এ বিভিন্ন দেশ থেকে আটজন শিল্পী আমন্ত্রিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ও। সেখানেই ‘মনে রেখো’ প্রদর্শিত হয়। ছবির অসামান্য আবহ তৈরি করেছেন শিল্পী তিমির বিশ্বাস। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্যা ভট্টাচার্য, যিনি খ্যাঁদা নামেই বেশি পরিচিত। প্রযোজনা ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সত্যজিৎ বিশ্বাস।