কলকাতা লিগের নবম রাউন্ড শেষ। মহামেডানের সঙ্গে মিনি ডার্বি হেরে খেতাবের দৌড় থেকে ছিটকে গেছে মোহনবাগান। এখন তারা পয়েন্টস টেবিলে পাঁচ নম্বরে। শেষ দুটি ম্যাচ সাদার্ন সমিতি আর কালীঘাট এমএসের বিরুদ্ধে। দুটো দলই অবনমনের আওতায় আছে। মরণ-কামড় দিতে ঝাঁপাবেই তারা। এদিকে এই দুটি ম্যাচে ছ’ পয়েন্ট না পেলে মোহনবাগানের পক্ষে প্রথম তিনে শেষ করাও কঠিন। সেক্ষেত্রে ১৯৫৭ সালের পর এটাই হবে কলকাতা লিগে মোহনবাগানের শোচনীয়তম ফলাফল। সমর্থকরা ইতিমধ্যেই আতঙ্কিত হতে শুরু করেছেন।
এবারের লিগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দুই প্রধানের অবস্থাই তথৈবচ। ইস্টবেঙ্গল তাও রেনবো-কে কোনোক্রমে হারিয়ে খেতাবের লড়াইতে এখনও টিকে আছে। কিন্তু মোহনবাগান যাকে বলে ভূপতিত। সমর্থকরা সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন তুলছেন, এমনটা হল কেন? আবাসিক ক্যাম্প হয়েছিল ঠিকঠাক, চার বিদেশি প্রায় একইসঙ্গে দলে এসেছিলেন। কোচ কিবু ভিকুনাকে নিয়েও যথেষ্ট স্বপ্ন দেখেছিলেন সমর্থকরা। ত্রিনিদাদ-টোবাকোর জাতীয় দলের খেলোয়ার ড্যানিয়েল সাইরাজকে নিয়েও আশা ছিল অনেকটাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, হাতে আপাতত পড়ে রয়েছে পেন্সিল।
ব্যর্থ হলেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়। স্প্যানিশ কোচকে এক্ষুনি বলির পাঁঠা করার যুক্তি নেই। কিন্তু, জবাবদিহি তো তাঁকে করতেই হবে। কর্মকর্তাদের বিদেশি নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মরশুমের প্রথম দুটি টুর্নামেন্টেই অচেনা একঝাঁক বিদেশিকে সই করানোর মাশুল গুনতে হচ্ছে। স্প্যানিশ খেলোয়ারেরা কলকাতা ময়দানের মাঠ, পরিবেশ, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়েই নিতে পারেননি এখনও। স্প্যানিশ স্টপার মোরান্তেকে শরীর দিয়েই অনায়াসে হারিয়ে দিচ্ছেন বিপক্ষ দলের আফ্রিকান ফুটবলাররা। এমন নরম প্রকৃতির ডিফেন্ডার দিয়ে কলকাতা লিগের কাদা মাঠে ভালো ফল আশা করা যায় না। মাঝমাঠে ভালো ভারতীয় খেলোয়ার নেই। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে মাঝমাঠ তাই বিদেশি দিয়ে ভর্তি করে নামতে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ফাঁকা পড়ে গেছিল আক্রমণভাগ। স্ট্রাইকার চামোরো পায়ে খুবই দুর্বল। ডিফেন্সে গুরজিন্দার মোহনবাগানের প্রায় ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছেন। তিন বছর হয়ে গেল, এখনো মিস হেড করেন, হেড করতে উঠে ফ্লাইট মিস হয়। রক্ষণভাগের অবস্থা বোঝা যায় ১০ গোল খাওয়ার পরিসংখ্যান দেখলেই।
ফিটনেসও একটা বড় কারণ এই ব্যর্থতার। প্লেয়াররা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। ফিজিকাল ট্রেনারের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। অসুস্থও হয়ে পড়ছেন অনেকে। কোচ কিবু ভিকুনা কয়েকটি ক্ষেত্রে দৃশ্যতই ভুল স্ট্র্যাটেজি নিচ্ছেন। ভালো খেলা সত্ত্বেও ব্রিটোকে বসিয়ে দিয়েছেন মহামেডান ম্যাচে। স্ট্রাইকাররা মাঝারিমানের। সমর্থকদের সঙ্গে কথা বললেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, এর চাইতে খেপ খেলে বেড়ানো ক্রোমাকে নিলে কাজে দিত বেশি।
দল ব্যর্থ হলে কথা উঠবেই। কিন্তু এখন চাইলেই বিদেশি পরিবর্তন করতে পারবে না মোহনবাগান। ভরসা রাখতে হবে স্প্যানিশ ব্রিগেডের ওপরেই। হয়তো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিলে তাঁদের আসল খেলা দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু আপাতত কলকাতা লিগে ভরাডুবি হওয়া আটকানো কঠিন মোহনবাগানের পক্ষে।