সময়টা ১৯১১ সাল। পরাধীনতার গ্লানি তখন সমস্ত দেশাবসীর মর্মে বাজছে। এমন সময় লড়াই বাঁধল গোরা পল্টনদের সঙ্গে। তবে সেটা খেলার মাঠের নিয়ম মেনে। ৯০ মিনিটের সেই লড়াইতে বাংলার দামাল ছেলেরা জাত চিনিয়েছিল। আর সেইসঙ্গে তৈরি হল এক ইতিহাস। মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের সেই দিনটাকে মাথায় রেখে প্রতি বছর ২৯ জুলাই পালন করা হয় মোহনবাগান দিবস। এবছরও করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত নিয়ম মেনেই অনলাইনে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি। আর ঠিক তার পরেই জানা গেল, এই দিনের তাৎপর্য যাতে আজকের পড়ুয়াদের কাছেও সমানভাবে পরিচিত হয়, তার উদ্যোগ নিল পশ্চিমবঙ্গ স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞের কমিটি।
এবার থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে জায়গা করে নিতে চলেছে ১০৯ বছরের সেই ইতিহাস। কীভাবে শিবদাস ভাদুড়ী, অভিলাষ ঘোষের পায়ে পায়ে বল জড়িয়েছে গোল পোস্টে, তার বিশদ বিবরণ থাকবে। সঙ্গে থাকবে সেই ঐতিহাসিক দলের প্রত্যেক সদস্যের নাম, ছবি এবং পরিচয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আগেই। আর সম্প্রতি তাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে নবান্ন। এমনটাই জানিয়েছেন স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞের কমিটির সদস্য দীপেন বসু। আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই অধ্যায়টি বাধ্যতামূলক করা হবে।
ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে মোহনবাগান শুধু যে একটা ম্যাচ জিতেছিল তাই নয়, দেশজুড়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে অনেকটা উস্কে দিয়েছিল। আর সেইদিন বিশাল ঘুড়িতে লেখা হয়েছিল জয়ের বার্তা। কলকাতার পথেঘাটে নেমে এসেছিল অকাল দীপাবলি। আজকের পড়ুয়াদের মধ্যেও এই ঘটনা একইভাবে দেশাত্মবোধের বীজ বুনে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই পুরোটা পাঠক্রমের মধ্যে জুড়ে নেওয়া হয়েছে। এর আগে বহুভাবে এই ঘটনা চর্চা করা হলেও কোনোদিন কোনো পাঠ্যপুস্তকে জায়গা পায়নি। কমিটির সূত্রে জানানো হয়েছে, অষ্টম শ্রেণীর 'স্বাস্থ্য ও শরীরশিক্ষা' বইতে একটি অধ্যায় হিসাবে থাকবে পুরোটা। আর এই ঘটনার সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবোধকে মিলিয়েই পুরোটা লেখা হবে। সেইসঙ্গে গোলকিপার হীরালাল মুখোপাধ্যায় এবং বাকি দশজনের বিস্তৃত পরিচয় ইতিহাসের অধ্যায়কে আরও জীবন্ত করে তুলবে বলেই জানানো হয়েছে। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও যে এইসব ঘটনা সমান তাৎপর্যপূর্ণ, সেবিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মোহনবাগান দিবসে সেজে উঠল টাইমস স্কোয়্যার, আনন্দে উদ্বেল সমর্থকরা