জলবায়ু পরিবর্তন, টেকটোনিক পাতের চলাচল, নিজের অক্ষের চারিকে ঘূর্ণন— একাধিক কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত বদলেছে পৃথিবীর আকৃতি (Shape of Earth)। এমনকি এখনও নিয়মিত একটু একটু করে বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকার। তবে এই বদল অত্যন্ত ধীর হওয়ায় তা সাধারণভাবে মানুষের চোখে দৃশ্যমান নয়। এবার এই পরিবর্তনের ধারাকে বুঝতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ মডেল তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা। যা মানুষের সামনে তুলে ধরবে বিগত ১০ কোটি বছর আগের পৃথিবীর ছবি।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সের ভূতাত্ত্বিকরা যৌথভাবে জন্ম দিয়েছেন এই বিশেষ মডেলটির। সম্প্রতি যা জায়গা করে নিয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞান পত্রিকা 'সায়েন্স' জার্নালে।
অবশ্য শুধু ১০ কোটি বছর আগের ছবিই নয়, পৃথিবীর আকারের ধারাবাহিক বিবর্তন ধরা পড়বে এই মডেলে। আসলে ১০ কোটি বছরের সময়সীমা ১০ লক্ষ সময়ফ্রেমে ভাগ করেছেন গবেষকরা। প্রতিটি সময়ফ্রেমের জন্যই পৃথক পৃথকভাবে ছবি তৈরি করেছে এই এআই। আর এই ছবিগুলিকে পর পর দেখলেই লক্ষ্য করা যাবে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠনের ধারাবাহিক পরিবর্তন। প্রাথমিকভাবে টেকটোনিক পাতের চলাচলের জন্য ভূত্বকের গঠনগত বদল, পরবর্তীতে সেই বদলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা হিমযুগের শুরুয়াত— সবটাই ধরা পড়েছে এই মডেলে। ধরা পড়েছে হিমবাহ থেকে সৃষ্ট নদী এবং সমুদ্রের তরঙ্গপ্রবাহে ভূমিক্ষয়ের কারণে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠনের পরিবর্তনও। পাশাপাশি ক্রমাগত ঘূর্ণনের কারণে কমেছে পৃথিবীর দুই মেরুর দূরত্বও। উল্লেখ, এই মডেলে তৈরি প্রতিটি ছবিই হাইরেজোলিউশন হওয়ার কারণে প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জিওসায়েন্সের গবেষক ও সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ডঃ ট্রিস্টান সেলেসের মতে, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বুঝতে অতীতের পর্যবেক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই এই মডেল তৈরির প্রচেষ্টা। পৃথিবীর আকৃতি বদলের জন্য দায়ী প্রতিটি রাশিকেই বিবেচনা করা হয়েছে এই মডেলে। ফলে, পরবর্তী গবেষণায় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নির্ণয় করতে ও সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহদের ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন বুঝতে এই মডেল বিশেষভাবে সাহায্য করবে গবেষকদের…
Powered by Froala Editor