বিধানসভা নির্বাচনের দুমাসের মধ্যেই বইমেলা। বাংলা প্রকাশনা জগতে ব্যস্ততা তুঙ্গে। আর তার মধ্যেই যুক্ত হল স্বজন হারানোর যন্ত্রণাও। বৃহস্পতিবার সকালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার ইন্দ্রাণী রায়। ‘মিত্র ও ঘোষ’ বই বিপননের জগতে এক অভিভাবকের মতো প্রতিষ্ঠান। আর অল্প বয়সেই সেই অভিভাবকের জায়গা নিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী রায়ও। বই ব্যবসায় নতুন নতুন প্রযুক্তির আমদানি থেকে ডিজিট্যাল টেকনলজিকে জুড়ে নেওয়া, সব বিষয়েই পথ দেখিয়েছেন ইন্দ্রাণী। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বইপাড়া।
একমাস আগেই ইন্দ্রাণী রায়ের ওভারিতে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। তখন সংক্রমণ চতুর্থ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সমস্ত ব্যস্ততা থেকে বিদায় নেবেন ইন্দ্রাণী, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। ৯ মার্চ মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনার ৮৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনেও সকলের সঙ্গে হইহই করে সময় কাটিয়েছেন। আলোচনা চলেছে বইমেলার প্রস্তুতি নিয়েও। আজ সেই সমস্তই স্মৃতি। দুপুর এগারোটা নাগাদ শেষবার কলেজস্ট্রিটে এলেন ইন্দ্রাণী, তবে তখন সে শরীরে আর প্রাণ নেই।
মাত্র কয়েকমাস আগেই লকডাউন ও আমফানের মিলিত আক্রমণে বিপন্ন বইপাড়ার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ইন্দ্রাণী। প্রথমে অবশ্য ভেবেছিলেন কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর একার উদ্যোগ দেখেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আরও অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি ও প্রকাশকদের জন্য সংগ্রহ করেছিলেন ২৪ লক্ষ টাকা। সেই টাকার একটা বড়ো অংশুই তুলে দিয়েছিলেন বইপাড়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামের একটি নতুন সংগঠনের হাতে। সমগ্র কলেজস্ট্রিট চত্ত্বরের মানুষের জন্য রয়্যাল ক্লাবের সঙ্গে মিলিত উদ্যোগে শুরু করেছিলেন কমিউনিটি কিচেনও।
সবসময় ব্যস্ততার মধ্যেই থাকতেন ইন্দ্রাণী। আর মেয়ের উদ্দীপনার সঙ্গে সমানে সঙ্গত দিয়ে গিয়েছেন বাবা সবিতেন্দ্রনাথ রায়ও। লকডাউনে কলেজস্ট্রিটে মানুষের যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে গেলে ইন্দ্রাণী নিজে পৌঁছে গিয়েছেন ক্রেতাদের কাছে। অবশ্য ই-বুক মাধ্যমকেও বেছে নিয়েছিল মিত্র ও ঘোষ। তবে ইন্দ্রাণী রায় বিশ্বাস করতেন, নতুন বইয়ের গন্ধকে কোনো প্রযুক্তিই হার মানাতে পারবে না। বইকে ভালোবাসাই তো তাঁকে কাজের শক্তি জুগিয়েছে। সেই সদা কর্মচঞ্চল মানুষটি এখন শুধু বেঁচে থাকবেন অসংখ্য সাহিত্যিক-প্রকাশক এবং বইপ্রেমীর মনে।
Powered by Froala Editor