অগ্নুৎপাতে ভস্মীভূত চারপাশ, ‘মিরাকেল’ হয়ে দাঁড়িয়ে একটিমাত্র বাড়ি!

রবিবার সকাল থেকেই একটু একটু করে কাঁপতে শুরু করেছিল মাটি। বোঝা যাচ্ছিল ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে চলেছে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকল লাভার স্রোত। ঠিক ৫০ বছর পর আবার জেগে উঠেছে ক্যানারি দ্বীপের কুম্বরে ভিয়েজা আগ্নেয়গিরি। লাভার স্রোতে ভেসে গিয়েছে সমগ্র লা-পালমা (La Plama) অঞ্চল। অথচ তার মধ্যেই অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটিমাত্র বাড়ি। আশেপাশের সবকিছু ভষ্মীভূত হয়ে গেলেও একটি বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি ভাইরাল হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। নেটিজেনরা তার নাম রেখেছেন মিরাকল হাউস (Miracle house)।

স্পেনের ফটোগ্রাফার আলফানসো এস্কালেরো অগ্ন্যুৎপাতের পরে তুলেছেন ছবিটি। তিনি ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে যে এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখবেন, সেটা আশা করেননি একেবারেই। ছবিটি ভাইরাল হতেই বাড়িটির বিষয়ে আরও খোঁজখবর শুরু হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে এক ডাচ দম্পতি কিনেছিলেন বাড়িটি। তাঁরা প্রতি বছর ছুটি কাটাতে গিয়ে থাকতেন সেখানে। কিন্তু অতিমারীর কারণে পরপর দুবছর যাওয়া হয়নি। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে ছিল বাড়িটি। সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি যখন ভাইরাল হয়, তখন নেদারল্যান্ডসে বসেই তা দেখেছেন ওই দম্পতি। এমনটাই জানিয়েছেন বাড়ির নির্মাতা অ্যাডা মনিকেন্ডাম।

খবর পাওয়ার পরেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে চাননি বাড়ির মালিকরা। অ্যাডা জানিয়েছেন, তাঁরা আনন্দ ও শোকের মিলিত অভিঘাত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। একদিকে অভাবিতভাবে বেঁচে গিয়েছে তাঁদের বাড়ি, অন্যদিকে আশেপাশের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এরপর যখন তাঁরা আবার যাবেন ওই বাড়িতে, তখন বাড়িটি আগের মতোই থাকবে। কিন্তু আশেপাশের দৃশ্য সবই বদলে যাবে। প্রতিবেশিদের অনেকেরই হয়তো হাসিমুখ আর দেখতে পাবেন না। এই সবকিছু মিলিয়েই এক মিশ্র অনুভূতির মধ্যে রয়েছেন ওই দম্পতি।

রবিবার অগ্ন্যুদ্গার শুরু হওয়ার পর সোমবার তা ব্যাপক আকার ধারণ করে ক্যানারি দ্বীপজুড়ে। এক এক জায়গায় লাভার স্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়েই মঙ্গলবার থেকে গতিবেগ কমতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে লাভার নির্গমণ বন্ধ হয়েছে। এখন লাভার স্রোত ঘণ্টায় ৪ মিটারের বেশি এগোতে পারছে না। কিন্তু ইতিমধ্যে অন্তত ২০০টি বাড়ি ধ্বংস করেছে এই অগ্ন্যুৎপাত। অন্তত ৬০০ মানুষ বাসস্থান হারিয়েছেন। এখনও অবধি নতুন করে আর কোনো বিপদের সংকেত না পাওয়া গেলেও এই ক্ষতি যে চিরস্থায়ী। তবে এই বিরাট ধ্বংসলীলার মধ্যে কীভাবে একটিমাত্র বাড়ি বেঁচে গেল, সে-কথা ভাবলে অবাক হতেই হয়।

আরও পড়ুন
আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরিতে মঙ্গলযাত্রার প্রস্তুতি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
হঠাৎ জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ, বিপন্ন সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপ