ত্বক ছাড়াই জন্ম, মৃত্যুকে জয় করে বিরল নজির ‘মিরাকল বেবি’র

আর পাঁচটা দিনের মতোই চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের কাজ করছিলেন। জন্ম নেবে ফুটফুটে একটি শিশু। চিকিৎসকদের আনন্দও তো ওই বাবা-মায়ের মতোই। তাঁদের হাত ধরেই তো ভূমিষ্ঠ হওয়া নতুন একটা প্রাণের। তবে সদ্যজাত সন্তানটি পৃথিবীর আলোয় আসার পর খানিকটা যেন আলো কমে গেল চিকিৎসকদের হাসিতে। সে জায়গায় উদ্বিগ্নতা। কারণ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে, তার শরীর জুড়েই ক্ষত। ক্ষত বলা ভুল হবে। আসলে তার দেহে বিকাশ হয়নি ত্বকের।

কাইডেন জেক শ্যাটক। জন্মের সময় মাত্র ২ শতাংশ ত্বকের উপস্থিতি ছিল তার শরীরে। তাতে কেবলমাত্র মুখের অংশটুকুই ঢাকা পড়ে। বাকি পুরো দেহটাই যেন অনাবৃত লাল মাংসপিণ্ড। অসহ্য যন্ত্রণা কথা না বলেও যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল শিশুটি। বাবা জেক শ্যাটক এবং মা জেসিকা কিবার সন্তানকে দেখার পরেই ভেঙে পড়লেন কান্নায়। ততক্ষণে চিকিৎসক বলে গেছেন মনকে শক্ত করে নিতে। নব-দম্পতির বয়স মাত্র আঠারো বছর। তাই পূর্ণ পরিণতি পায়নি ভ্রূণ। ত্বকের অনুপস্থিতির পাশাপাশিই তার শরীরে বাসা বেঁধেছে নেক্রোটাইজিং এন্টারোকোলোটিস, ব্রঙ্কোলিওলাইটিস, ডার্মোলাইসিসের মতো রোগ। ফলে দীর্ঘায়ু পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

কিন্তু এভাবেই কি আশা ছেড়ে দেওয়া যায়? শুরু হল লড়াই। হাসপাতালেই স্পেশাল ওয়ার্ডের যত্নে থাকল ছোট্ট ব্রিটিশ শিশুটি। তবে চিকিৎসকদের অবাক হওয়ার বাকি ছিল বৈকি। এই কঠিন ব্যাধিকেও হারিয়ে দিল ছোট্ট কাইডেন। ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগল ত্বক। ১১ সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরল কাইডেন। তখনও অবশ্য তাকে কোলে নেওয়া যায় না খালি হাতে। নরম কম্বলে জড়িয়ে রাখতে হয়, এতটাই পাতলা তার ত্বক। 

কাইডেনের বর্তমান বয়স প্রায় দু’বছর। বধিরতা ছাড়া সব প্রতিবন্ধকতাকেই হারিয়েছে সে। অবাক করেছে পৃথিবীকে। কারণ ইতিহাসে এমন ঘটনা একেবারেই বিরল। যদিও এখনও সুতির জামা পড়লে ত্বকে ক্ষত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তবু আর দশটা শিশুর মতোই স্বাভাবিক জীবন কাইডেনের। হাসিখুশি কাইডেনের এখনকার ছবি দেখলেও কেউ মেলাতে পারবে না তার জন্মাবস্থার ছবির সঙ্গে। ছোট্ট কাইডেন যেন ‘মৃত্যুঞ্জয়’-এর প্রতিশব্দ হয়ে গেছে। ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হওয়ায়, উচ্ছ্বসিত সংশ্লিষ্ট সেই হাসপাতালের চিকিৎসকও। এমন হেরে যাওয়া আনন্দেরই হয় হয়তো। তাঁর কাছে মিরাকল বেবী হিসাবেই এখন পরিচিত কাইডেন...

Powered by Froala Editor

Latest News See More