গ্রামের রাস্তা দিয়ে লাঙল কাঁধে হেঁটে যাচ্ছে একদল বালিকা। কারোর বয়স ১০ বছর, কারোর আবার ৫। শরীরে তিলমাত্র পোশাকটুকুও নেই। গ্রামের ঘরে ঘরে ঘুরে তারা ভিক্ষা চাইছে। কারোর ঘরে ময়দা, কারোর ঘরে ছাতু। যার কাছে যা পাওয়া যায় তাই নিয়ে গিয়ে জরো করতে হবে মন্দিরের সামনে। ৬ জন নগ্ন বালিকার সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাও। তাঁরা পাশে পাশে ঈশ্বরের উদ্দেশে ভজন গাইতে গাইতে চলেছেন। না, মধ্যযুগের কোনো ছবি নয়। গত রবিবারেই মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে ঘটে গিয়েছে এই ঘটনা। ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছে সেই ভিডিও। জানা গিয়েছে, অনাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতেই এই বিশেষ রীতি পালন করেছেন গ্রামবাসীরা।
আর এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করেই নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। বিগত কয়েক দশকে প্রকাশ্যে এমন রীতির কথা জানা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কোন অন্ধকার সময়ে দিকে এগোচ্ছে আমাদের দেশ? যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের দামোর জেলার বনিয়া গ্রামে প্রায় প্রতি বছরই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গ্রামবাসীদের কারোরই এই প্রথাকে ঘিরে কোনো আপত্তিও নেই। কৃষিপ্রধান দেশ ভারতে বৃষ্টিপাত সকলের কাছেই ভীষণ প্রয়োজন। আর অনাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নানা ধরণের আচার-অনুষ্ঠানই দেখা যায় দেশজুড়ে। কোথাও যজ্ঞানুষ্ঠান করা হয়, কোথাও আবার ব্যাঙ বা গাধার বিয়ে দেওয়া হয়। তবে বৃষ্টিপাত যে নিছক প্রাকৃতিক ঘটনা, এবং তার সঙ্গে এরূপ আচারসর্বস্বতার কোনো সম্পর্ক নেই, সেই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগও চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তবে দামোর জেলার এই প্রথার কাছে যে বাকি সমস্ত প্রথাই অনেকখানি নিরীহ, সে-কথা স্বীকার করতেই হয়।
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। জাতীয় শিশু-সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট চেয়েও পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ কমিশনার ডিআর তেনিয়ার অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি তাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এবং কাউকে তার বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে জোর করে হাঁটানো হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে দামোর জেলাশাসক এস কৃষ্ণচৈতন্য জানিয়েছেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও প্রশাসনের তরফ থেকে গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।
তবে এইসব বিতর্কের পরেও গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, তাঁদের এই অনুষ্ঠান বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করবে। আর কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি নামলে মাঠের প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ধানগাছগুলোও হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে। এই বিশ্বাসের সঙ্গে লড়াইটা সত্যিই কঠিন। কিন্তু বছরের পর বছর চলতে থাকা এমন একটা প্রথা নিয়ে কেন আগে তৎপর হয়নি প্রশাসন, উঠছে সেই প্রশ্নও। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ দেশ ভারতবর্ষে অধিকাংশ মানুষই যে এখনও আধুনিকতার আলোকবৃত্তের বাইরে থেকে গিয়েছেন, একের পর এক ঘটনায় যেন সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন
পুজো চলছে ‘করোনা মাতা’র, মহামারী থেকে বাঁচতে কুসংস্কারে ঝুঁকছে শিলিগুড়ি!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রতিবছর বিশ্বে যৌনাঙ্গ অপসারণের শিকার অসংখ্য মহিলা, ভারতেও প্রচলিত ছিল এই ঘৃণ্য প্রথা