বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য প্রতি বছর কয়েক লক্ষ প্রাণী প্রাণ হারায়। নতুন ওষুধের নমুনা পরীক্ষা হোক বা জীববিজ্ঞানের সাধারণ গবেষণা - তাদের মৃত্যু অনিবার্য। অবশ্য এ নিয়ে বেশ কিছু সরকারি বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু তারপরেও সংখ্যাটা অবাক করার মতো। কেবল জার্মানির কথাই যদি ধরা হয়, ২০১৭ সালে সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ২৮ লক্ষ প্রাণী ব্যবহার করা হয়েছিল গবেষণার জন্য। এর অধিকাংশই ইঁদুর গোত্রের। এছাড়া আছে কুকুর, বিড়াল, বাঁদর এবং অনেক প্রজাতির মাছ। তবে এই তথ্যেও নাকি ভেজাল ছিল। আর সেই তথ্য প্রকাশ্যে এল তিন বছর পর।
দীর্ঘদিন ধরেই জার্মানির গ্রিন পার্টি অভিযোগ জানিয়ে আসছে, গবেষণায় পশুপাখির ব্যবহার সংক্রান্ত সঠিক তথ্য প্রকাশ্যে আনছে না সরকার। সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী কেবল গবেষণার কাজে ব্যবহৃত প্রাণীর সংখ্যাই জানা যাচ্ছে। কিন্তু এর জন্য কত পরিমাণ প্রাণীর জন্ম দেওয়া হচ্ছে, এবং তাদের অন্তিম পরিণতি কী হচ্ছে, সেকথা জানাচ্ছে না সরকার। অবশেষে চাপের মুখে পড়ে সেই তথ্য প্রকাশিত হল। এবং পার্লামেন্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জানা গেল, ২০১৭ সালে ৩৯ লক্ষ প্রাণীকে গবেষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। অর্থাৎ ব্যবহৃত প্রাণীর থেকে যে সংখ্যাটা ১১ লক্ষ বেশি। এখন প্রশ্ন হল, এই অবশিষ্ট প্রাণীদের পরিণতি কী হল। সরকারের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এই অবশিষ্ট প্রাণীদের মেরে ফেলা হয়েছে নির্বিচারে। আর এই তথ্য গোপন করা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আবার সমালোচনায় সরব হয়েছেন গ্রিন পার্টির সদস্যরা।
গবেষণার জন্য প্রস্তুত প্রাণীদের অনেক সময়েই সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। গবেষকরা যে বিশেষ জেনেটিক চরিত্র দাবি করেন, তা সঠিকভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না সবসময়। কিন্তু তার জন্য এই বিরাট সংখ্যক নিরপরাধ প্রাণীদের প্রাণ হারাতে হয়! হ্যাঁ, আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য নানা নমুনা প্রয়োজন হয় ঠিকই। তবে সেইসঙ্গে নিরপরাধ প্রাণীদের একটু মানবিক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টাও কি করা যায় না? অবশ্য বিজ্ঞানীরাই সেবিষয়ে আরও ভালোভাবে বলতে পারবেন। তবে বিজ্ঞানের এমন অমানবিক ব্যবহার আদৌ মানুষের কল্যাণ ঘটাতে পারবে তো? এই নিয়ে নীতিগত প্রশ্নকেও তো ঠেকিয়ে রাখা যায় না।