সিগারেট কতটা ‘ক্ষতিকর’, তার পরীক্ষা করা হয় নিরীহ প্রাণীদের ওপর!

‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে ক্যানসার হয়।’ সিনেমা থেকে বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং— সমস্ত জায়গায় এই কথাটি চোখে পড়ে। শুধু সিগারেট-বিড়ি কেন; তামাকজাত যে কোনো দ্রব্যের জন্যই এমন সতর্কতা প্রযোজ্য। তবুও কি নিস্তার আছে? তবে কেবল মানুষরাই যে সিগারেট খায়, তা কিন্তু নয়। সেই তালিকায় আছে কুকুর, বানর, বিড়াল… কী, অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না; বরং একটু শিহরিত হন। কারণ এক-একটি সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব কতখানি, তা পরীক্ষা করতেই এই প্রাণীদের ‘গিনিপিগ’ বানানো হয়!

সিগারেট নিয়ে আমরা যতই সচেতনতা তৈরি করি না কেন, বিক্রি কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। সস্তা থেকে দামি, রুচি অনুযায়ী অনেকেই সুখটান দেন। চিন্তার মুহূর্তেই হোক, বা বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়া— সিগারেট যে অনেকেরই ‘বন্ধু’! কিন্তু সেই বন্ধুই যে শরীরের ভেতরে বিষ ভরে দিচ্ছে, তার খবর কে রাখে! কিন্তু সিগারেট বিক্রি বন্ধ হয়নি, উৎপাদনও থামেনি। বরং তা আরও বেড়ে চলেছে। ‘চমক’ বাড়াতে সিগারেটের তামাকে মিশছে নানা স্বাদ, গন্ধ। কিন্তু সেসবের আড়ালে যে নৃশংস ঘটনা ঘটে চলেছে, তার খবর কতটা রাখি আমরা? আমাদের নেশার আড়ালেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অবলা পশুরা… 

আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরে সিগারেট তৈরির কারখানায় চালু রয়েছে এই বিশেষ গবেষণাগার। সার দিয়ে রাখা বিভিন্ন জন্তু; আর তাদের মুখে লাগানো রয়েছে বিশেষ মাস্ক। আর সেখানেই আটকানো রয়েছে জ্বলন্ত সিগারেট। কেন? ‘পরীক্ষা’ করা হচ্ছে। কীসের পরীক্ষা? সিগারেটের গুণমানের। কিন্তু সিগারেট তো মানুষের নেশা; এতে এই প্রাণীগুলো কী দোষ করল? সিগারেটের ক্ষতিকর দিক, বা অন্যান্য জিনিসগুলো যদি মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়, তাহলে বেচবে কাকে? আর প্রতিটা জিনিসই তো ল্যাবের জন্তুদের ওপরেই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তাই সিগারেটও পরীক্ষা করা হচ্ছে… 

আর এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে এই প্রাণীদেরই। ইঁদুর, গিনিপিগ তো বটেই; অনেক সময় কুকুর, বিড়াল, বানর ও অন্যান্য প্রাণীদেরও ‘স্যাম্পল’ বানিয়ে কাজ সাড়া হয়। এখন অবশ্য ইঁদুরের পরিমাণটাই বেশি। সিগারেটের ধোঁয়া সবার পক্ষেই ক্ষতিকর। এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে তো আরওই ক্ষতিকর। তবুও প্রায় জোর করে সিগারেট টানানো হয়। মুখে শক্ত করে লাগিয়ে রাখা হয় মাস্ক। তারপর টানা তিনদিন ধরে চলে ধোঁয়ার অত্যাচার। যার ফল, নিশ্চিত মৃত্যু। মৃত্যু হলেই প্রাণীটির পোস্টমর্টেম করে দেখা হয়, ঠিক কী কী ক্ষতি হল শরীরে! মৃত্যু না হলেও পরীক্ষা করার জন্য মেরে ফেলা হয় এদের। যেহেতু তামাকজাত দ্রব্য থেকে ক্যানসারও তৈরি হয়, তাই তারও ‘পরীক্ষা’ চলে সিগারেট ব্যবসার আড়ালে।   

আরও পড়ুন
সংশোধনের পথে প্রাণী সুরক্ষা আইন, পশু নির্যাতনে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ব্যবসা ও চাহিদা বজায় রাখার জন্য এতটাও নৃশংস হতে পারে! তাদের অবশ্য বক্তব্য, তুলনামূলক ‘নিরাপদ’ সিগারেট তৈরি করার জন্যই এত পরীক্ষা নিরীক্ষা। কিন্তু আজ থেকে তো হচ্ছে না; বহু বছর ধরে এমন চেষ্টা চলছে। এর আগেও অনেক সংগঠন এই অদ্ভুত নিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সিগারেট যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে তার নানা ধরণ-ধারণ। আর এসবের আড়ালে শেষ হচ্ছে সমস্ত প্রাণী। কবে বন্ধ হবে এমন অত্যাচার? 

তথ্যসূত্র-

আরও পড়ুন
পুরনো টিভি সেটই হয়ে উঠছে পথের প্রাণীদের আস্তানা, মানবিক উদ্যোগ আসামের যুবকের

১. Carcinogenic Animal Testing: How Cigarettes Are Tested On Animals, Truththeory

২. Smoking Experiments on Animals, PETA

আরও পড়ুন
প্রাণীদের মধ্যে সংকট ডেকে আনছে সুরক্ষা আইনই, উত্তাল আন্তর্জাতিক সমাবেশ

Powered by Froala Editor