“রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনির ঘরে সে ধন আছে” – উপেন্দ্রকিশোরের এই গল্পই যে কোনোদিন বাস্তবে পরিণত হবে, তা কে ভেবেছিলেন? অবশ্য টুনটুনি নয়, বরং বাস্তবে পায়রারাই হয়ে উঠেছে এক একজন রাজা-রাজরার সমান। তাদের সম্পত্তির কথা ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়। কোটিপতি সব পায়রার বাস রাজস্থানের যশনগর গ্রামে। বিশ্বাস না হলেও সত্যি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে কোটির নিচে তাদের হিসাব চলে না।
রাজস্থানের নাগাউর শহরের কাছে ছোট্ট একটি গ্রাম যশনগর। অবশ্য রাজা-রাজরার দেশ রাজস্থান। আজ তার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট না থাকলেও, যা আছে তাও কম নয়। আর এই রাজস্থানের একটি প্রাচীন রীতি ছিল পরিবারের কিছু সম্পত্তি পায়রার কাছে জমা রাখা। সময়ের নিয়মে বেশিরভাগ জায়গা থেকেই সেই রীতি মুছে গেলেও যশনগর গ্রামে সেই রীতি ফিরে আসে বছর ৪০ আগে। স্থানীয় এক শিল্পপতি সজ্জনরাজ জৈন গড়ে তোলেন একটি ট্রাস্ট। আর সেই ট্রাস্টে বিপুল আগ্রহে গ্রামবাসীরা নিজেদের সম্পত্তির অংশ দান করতে থাকেন।
দেখতে দেখতে দানসামগ্রীতে রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে ফান্ড। কেউ কেউ তো নিজেদের জমি পর্যন্ত দান করে দিয়েছেন ফান্ডে। গ্রামের মহিলারা তুলে দিয়েছেন তাঁদের সোনার অলঙ্কার। আজ এই পায়রাদের নামে রয়েছে অন্তত ১২৬ বিঘা আবাদি জমি। এছাড়াও রয়েছে ২৭টি দোকান। আর ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পরিমাণ? তাও ৩০ লক্ষের বেশি। ২৭টি দোকানের এক একটি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া অনাবাদি জমিতে গড়ে উঠেছে টুরিস্ট রিসর্ট থেকে শুরু করে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে ৭০টির বেশি গোশালা। সেখানে ৪০০-র বেশি গরু প্রতিপালন করা হয়। তবে এসবের লভ্যাংশের উপরে অধিকার একমাত্র গ্রামের পায়রাদের।
পাখিদের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি যে প্রাণীটি, তার নাম অবশ্যই পায়রা। কিন্তু সামান্য কিছু দানাপানি ছাড়া আর কীই বা জোটে তার? রাজস্থানের এই গ্রাম তাই রীতিমতো অবাক করে। পায়রারাই যে এখানে উদ্যোগপতি। রাজকীয় পায়রাদের দেখতে তাই প্রতি বছরই ভিড় জমান নানা দেশের মানুষ।
আরও পড়ুন
একটানা ২৫ দিন ঘুম, তার মধ্যেই স্নান-খাওয়া— রাজস্থানের ‘কুম্ভকর্ণে’র গল্প
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গ্রামের মেয়েকে বাঁচাতে রাতারাতি জনশূন্য রাজস্থানের এই শহর!