প্রকৃতিকে বিপন্ন করে আজ মানুষ আবার নিজেই অনুতাপ করছে। একইভাবে যে বিপন্ন হয়েছে মানুষের অস্তিত্বও। তাই প্রাণ-প্রকৃতিকে বাঁচাতে নানারকম উদ্যোগের পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থাও। কিন্তু আইন করে ঠিক কতটুকু পরিবর্তন আনা যায়? এই প্রশ্নটাই নতুন করে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকালে। পরিবেশ সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইনের দুই দশক পুর্তিতে সেদেশে আইনের সাফল্য তো দূরস্থান, বরং চূড়ান্ত ব্যর্থতাই নজরে পড়বে। কোনো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশ নয়, অস্ট্রেলিয়ার মতো অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ‘এগিয়ে’ থাকা দেশেই অবস্থাটা বিস্ময়জনক।
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণের দুটি রাজ্য নিউ সাউথওয়েলস এবং ক্যুইন্সল্যান্ড। এই দুই রাজ্যের উপর সমীক্ষা চালিয়েছে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকারী সংস্থা ডব্লিউ ডব্লিউ এফ। আর পরিসংখ্যানের হিসাব থেকে প্রথম চার বছর এবং শেষ তিন বছরের তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০০৪, এই চার বছর ধরা যাক লেগে গিয়েছে আইন বলবত করতে। আর ২০১৭ থেকে নানা প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় অনেক বনভূমি নষ্ট হয়েছে, তাই প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া সহজ নয়। কিন্তু এই মাঝের ১৩ বছরেও এক মিলিয়ন হেক্টরের উপর বনভূমি নষ্ট হয়েছে দুটি রাজ্যে। আর এই কাজটা করেছে অবশ্যই মানুষ। দুই রাজ্যে ৮৭ শতাংশের বেশি বনভূমি নষ্ট হয়েছে।যার মাত্র ০.১২ শতাংশ হয়েছে কৃষিকাজের জন্য।
আইন অনুযায়ী যদিও বন এবং বন্যপ্রাণের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন সমস্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। তাই অভিযোগের তির উঠছে সরকারের দিকেই। হয় জেনেবুঝে এমন প্রকল্পে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অথবা বেআইনি নির্মাণ রুখতে ব্যর্থ প্রশাসন। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য পুরো ব্যাপারটা নিয়েই এক অস্পষ্ট মন্তব্য করা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী কোনোভাবেই পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটাতে পারে এমন কোনো প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, মাত্র দুই দশকের মধ্যে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি বনভূমি নষ্ট করে সেই ক্ষতি আর কীভাবে পূরণ করা যাবে?
Powered by Froala Editor