দুধই শেষ অবধি ত্রাতা হয়ে দাঁড়াল উটের, রাজস্থান জুড়ে দুগ্ধজাত শিল্প গড়ে তোলার প্রস্তুতি

সবে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তখন। গত ৪ এপ্রিল সেই লকডাউনের মধ্যেই মুম্বাইয়ের এক ভদ্রমহিলা প্রধানমন্ত্রীকে ট্যুইট করেন অনুরোধ করে। বিষয়, অটিজমে আক্রান্ত সন্তানের জন্য তাঁর প্রয়োজন উটের দুধ। কিন্তু সমস্ত পরিষেবা বন্ধ হওয়ার দরুন রেশ পড়েছে সেই সরবরাহেও। আইপিএস অফিসার অরুণ বোথরার নজরে আসতেই ব্যবস্থাগ্রহণ করেন তিনি। জরুরী অবস্থাতেই রাজস্থান থেকে ২০ লিটার হিমায়িত উটের দুধ এবং ২০ কেজি গুঁড়ো দুধে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন তিনি। ১০ এপ্রিল মুম্বাই এসে পৌঁছায় সেই দুধ।

তবে এই ঘটনা কোনো খণ্ডচিত্র নয়। সারা ভারতের বিভিন্নপ্রান্ত জুড়েই সম্প্রতি বেড়েছে উটের দুধের চাহিদা। অটিজম, জন্ডিস, ডায়াবেটিস, লিভার, এমনকি ক্যানসারের ক্ষেত্রেও উটের দুধের ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। উটের দুধে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন-সি, ইমিউনোগ্লোবিন এবং প্রচুর খনিজ। যা কার্যত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উটের দুধের চাহিদা বেড়েছে আরও।

তবে উটের দুধের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের একটি বড়ো অংশ ওয়াকিবহাল হওয়াই যেন বর হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে। সেই সঙ্গে উট প্রতিপালকরাও আশার আলো দেখছেন। ২০১২ সালের সুমারি অনুযায়ী ভারতে উটের সংখ্যা ৪ লক্ষ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র আড়াই লাখে। সেই সংখ্যা বর্তমানে আরও কমেছে বলেই সম্ভাবনা। কারণ ২০১৪ সালে রাজস্থান সরকার নিষিদ্ধ করে উট বিক্রি। তার ফলে মাংসের জন্য উটের চাহিদা এক ধাক্কায় কমে আসে অনেকটাই। সেইসঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থা এবং চাষের জন্যও ব্যবহৃত হত উট। এখন সেই খামতি মেটাচ্ছে ট্র্যাক্টর কিংবা মোটরবাইক। দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর ধরেই পেট্রোলিংয়ের জন্য বিএসএফও বন্ধ করেছে উটের ব্যবহার। কেবলমাত্র পর্যটকদের জন্যই বর্তমানে সামান্য সংখ্যক উট ব্যবহৃত হয়ে থাকে রাজস্থানে।

গুজরাট, হরিয়ানার মতো অন্যান্য রাজ্যেও সামগ্রিক ছবি একই রকমের। উটের দাম গত ৬ বছরে ৫০ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দেড় হাজারে। বিপুল খরচ বহন করে উট প্রতিপালনই যেন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল মানুষের কাছে। দুধের চাহিদা বাড়ায় সেই সমস্যারই সমাধান খুঁজে পেয়েছেন উট-প্রতিপালকরা। উটের দুধের দাম লিটার পিছু ৫০ টাকা হওয়ায় দিনে ১০০০-২০০০ টাকার মতো আয় করছেন তাঁরা। ফলে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে না অবলা প্রাণীদেরও। 

আরও পড়ুন
৫০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল উটপাখির ডিমের ‘কারুকার্য’, বলছে গবেষণা

উট-দুগ্ধকে কেন্দ্র করেই নতুন করে বাণিজ্যেরও পথ দেখছে রাজস্থান। গড়ে উঠেছে একাধিক দুগ্ধজাত পণ্যের স্টার্ট-আপ কোম্পানি। এই শিল্পের ওপরে জোর দিচ্ছে রাজস্থান সরকার। প্রান্তিক অঞ্চলে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। সব মিলিয়ে প্রায় এক দশক পরে আবার সহাবস্থানের মধ্যস্থতার দিকেই হাঁটছে মানবসভ্যতা এবং উটের অস্তিত্ব...

আরও পড়ুন
কমছে জল, ১০০০০ উট মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ায়!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দ্রুত হারে কমছে উটের সংখ্যা, হারাতে বসেছে মরুভূমির জাহাজ