আত্মীয় পরিজনদের ছেড়ে এই লকডাউনের মধ্যে ভিনরাজ্যে পড়ে থাকা, পরিযায়ী শ্রমিকদের পক্ষে যেন আর সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রের নির্দেশে অবশ্য তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকের খুব সামান্য অংশই এই সুবিধা পাচ্ছেন। অনেকেই তাঁদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন পায়ে হেঁটে। আর এর মধ্যেই ঘটে গেল এক দুর্ঘটনা। বাড়ি ফেরার পথেই মালগাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারালেন অন্তত ১৫ জন শ্রমিক।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ সকাল ৫:৩০ নাগাদ। ঔরঙ্গাবাদ-জালনা রেললাইনে বদনাপুর স্টেশনের কাছে মালগাড়ির চালক হঠাৎ দেখলেন রেললাইনের উপর শুয়ে আছে ১৫-২০ জন মানুষ। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। এর মধ্যেই গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেছিলেন চালক, কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ১৫টি জলজ্যান্ত মানুষের শরীর পিষে গিয়েছে ভারী লোহার চাকায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল অধিকাংশ শ্রমিকের। আর বাকিদের নিয়ে যাওয়া হল ঔরঙ্গাবাদ সিভিল হসপিটালে। তবে আহতদের মধ্যে একজন বাদে কাউকেই হয়তো আর বাঁচানো যাবে না।
লকডাউনের মধ্যে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন অনেকেই। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সেইসঙ্গে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেলওয়ে প্রশাসন। এখনও অবধি যা জানা গিয়েছে, আহত ও নিহত প্রত্যেকের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া এবং শাহদোল গ্রামে। তাঁরা জালনা শহরে এসআরজি কোম্পানিতে কাজ করতেন। লকডাউনের মধ্যে বাড়ি ফেরার অন্য ব্যবস্থা না পেয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন প্রত্যেকেই। রেললাইনের কাছে এসে হয়তো ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আর তার মধ্যেই ঘটলো এই দুর্ঘটনা।
মহামারী যখন আসে, তখন সমস্ত দিক থেকে আক্রমণ করে সমাজকে। একদিকে যেমন প্রতিদিন করোনা ভাইরাসের আক্রমণে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ, সেইসঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুও। ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের হয়তো সত্যিই এই মহামারী মোকাবিলার যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই। কিন্তু সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন সত্যিই প্রয়োজনীয় ছিল। তবে আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে হয়তো অনেক পরিযায়ী শ্রমিক এতদিনে নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরে যেতে পারতেন।
চিত্রঋণ- ইন্ডিয়া টুডে