লকডাউনে চরম অসহায় অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের। দেশজুড়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। রোজই খবর পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য শ্রমিক কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেই ফিরছেন নিজের রাজ্যে। অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন পথে। রোজ কিছু না কিছু দুর্ঘটনার খবর আসছেই। তবে এসব উপেক্ষা করেই ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে পথে নামছেন রোজগারহীন শ্রমিকরা। ঘরে পৌঁছানোর এমনই এক তাগিদ।
এরই মধ্যে একটি ছবি চমকে দিয়েছে সকলকে। বিশাল যমুনা নদী পায়ে হেঁটে পেরোচ্ছেন শ্রমিকেরা। কোথাও হাঁটু অবধি জল। আবার কোথাও নদীর গভীরতা আরো বেশি। মাথায় বোঝা, কোলে ছোট্ট শিশু নিয়েই অনেকে টায়ার-টিউবে চেপে পার হচ্ছেন নদী। একাধিক আন্তঃরাজ্য সীমান্তগুলি বন্ধ থাকায় এভাবেই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। বাড়ি ফেরার আর্তি যে কী করুণ হতে পারে, তারই প্রমাণ এই ছবি।
হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের সীমান্ত সাক্ষী থাকে এই ঘটনার। যমুনানগর জেলার অন্তর্গত এই নদী পেরিয়েই উত্তরপ্রদেশের কর্নাল জেলায় পৌঁছান ওই শ্রমিকরা। সারা রাত ধরে এভাবেই নদী পারাপার করেন শতাধিক শ্রমিক। অনেকের গন্তব্য উত্তপ্রদেশ, অনেকের বিহার, কেউ বা যাবেন উড়িষ্যায়।
গতকালের আরো একটি ঘটনা নজর কাড়ে সকলের। নেটমাধ্যমে রীতিমতো সাড়া ফেলে সেই ছবি। উত্তরপ্রদেশের এক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফেরার জন্য বাধ্য হয়েই চুরি করেছেন একটি সাইকেল। কিন্তু সেই সাইকেলচুরির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে রেখে এসেছিলেন একটি চিরকুটও। তাঁকে যে বাধ্য হয়েই এ কাজ করতে হয়েছে, সেই অসহায়তা ফুটে উঠছে চিঠির ছত্রে ছত্রে। ঘটনাটি ঘটে রাজস্থানের ভারতপুরে। বিকলাঙ্গ সন্তানকে নিয়ে ২৫০ কিমি দূরের বেরেইলি পৌঁছবার জন্য সত্যিই কি আর কোনো পথ খোলা ছিল ওই শ্রমিকের?
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার পথে যাতে অন্নসংস্থান করা হয়, তার অনুরোধেই জমা পড়েছিল একটি পিটিশন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয় এই পিটিশনটি। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিচলনে নজর রাখা কার্যত অসম্ভব বলেই জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
এভাবেই দেশের নানান প্রান্ত থেকে উঠে আসছে হাহাকার, নিঃস্বতার বিদীর্ণ ছবি। আমরা দেখছি, জানছি, পড়ছি। হয়তো সাধ্যমতো চোখের জলও ফেলছি। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িতে দিচ্ছি অসহায় এই মানুষগুলোর দিকে। কিন্তু তারপর? উত্তর জানা নেই কারোরই...