শ্মশানে পড়ে আছে পচা কলা, ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা

নদীর ধারে শ্মশানের ঘাটে পড়ে আছে কিছু কলা। অধিকাংশ কলাই পচে গিয়েছে, পচন ধরেছে অবশিষ্ট কলাতেও। সম্ভবত কোনো পুজোর উপচারে ব্যবহৃত হয়েছিল এই কলা। আর খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে তার দিকেই হাত বাড়াল মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লি শহরের উপকন্ঠে। যমুনা নদীর ধারে নিগমবোধ শ্মশান ঘাটে ভাগাভাগি করে পচা কলা খেতে দেখা গেল একদল মানুষকে। পেশায় প্রত্যেকেই শ্রমিক। ভিনরাজ্য থেকে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন দিল্লি। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় কাজ তো হারিয়েছেন, সেইসঙ্গে বাড়ি ফেরার রাস্তাও বন্ধ। পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন দুরাবস্থার ছবি দেখে শিউরে উঠেছেন সারা দেশের মানুষ।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে সারা দেশে রাতারাতি লকডাউন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সরকার। দফায় দফায় তার মেয়াদও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অনেকেই আটকে পড়েন বাড়ির বাইরে। তবে অনেক মানুষকেই উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে সরকার, বেশ কিছু স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন স্তর থেকে বারবার অনুরোধের পরেও পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি অদ্ভুতভাবে উদাসীন থাকে সরকার। রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও প্রায় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের জন্য কোনো স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এদিকে শ্রমিকদের কোনোরকম দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করছে মালিকপক্ষও। ফলে এই আতঙ্কময় পরিস্থিতিতে মাথার উপর ছাদ নেই শ্রমিকদের। রাস্তার ধারে ফুটপাতে বা ব্রিজের নিচে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। দিল্লি, মুম্বইসহ সমস্ত শহরেই ছবিটা একই। স্যোশাল ডিসটেন্সিং তাঁদের কাছে বিলাসিতা। ভাইরাসের সংক্রণের আগেই শরীরে থাবা বসিয়েছে অনাহার। সরকারের তরফ থেকে রেশন সরবরাহ করার কথা বলা হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব কিছুই পৌঁছচ্ছে না তাঁদের কাছে।

যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে সবার আগে বিপদে পড়েন সাধারণ দিনমজুররা। করোনা মহামারীর সময়েও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার সঙ্গে ভারতবর্ষের বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা তো আছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রশ্ন তো অনেক পরের, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকার থেকেও ক্রমাগত বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। মাথার উপরে ছাদ নেই, খাবারের সংস্থান নেই। নিজের দেশে পরিচিত মানুষদের কাছে পৌঁছতে পারলেও হয়তো একটু সাহস পেতেন এই কঠিন সময়ে। কিন্তু সেই সুযোগটাও নেই তাঁদের কাছে। এই বিভীষিকার শেষ কোথায়, উত্তর খুঁজছেন প্রত্যেকেই। ততদিন এমন অনেক অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকবে করোনার দিনগুলি।

Latest News See More