জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতি। বিশেষ করে অণুজীবরা। কিন্তু অণুজীব মানেই তাদের নিরীহ মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং বেশ কিছু অনুণুজীব রীতিমতো জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে চলেছে। সম্প্রতি তেমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাজির করলেন ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের মেরু বিশেষজ্ঞ জোসেফ কুক। আর সেই রিপোর্টেই দেখা গিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর গলে যাওয়ার পিছনে অন্যতম অনুঘটকের কাজ করছে সেখানকার এক বিশেষ ধরণের শৈবাল।
২০১০ সালে প্রথম নিজস্ব শো-এর জন্য গ্রিনল্যান্ডের বুকে পা রাখেন জোসেফ কুক। আর গিয়েই অবাক হয়ে যান। এতদিন গ্রিনল্যান্ডের যে বর্ণনা তিনি জেনে এসেছেন, তাতে সেখানে সাদা বরফের স্তর ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু কুক দেখলেন, সাদার মধ্যেই নানা বর্ণের খেলা। নীল-বেগুনির পাশাপাশি আছে কালো এবং ধূসর ছাপ। ভালো করে পরীক্ষা করে বুঝলেন, সেগুলি আসলে শৈবাল। কিন্তু এদের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা তখনও বুঝতে পারেননি। সেটা টের পেলেন আরও ৫ বছর পর, যখন মেরু অঞ্চলের বরফ গলন নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
জোসেফ কুক দেখলেন, বরফ যত গলছে, ততই বাড়ছে শৈবালের পরিমাণ। শুরু হল পর্যবেক্ষণ। দেখা গেল, গ্রিনল্যান্ডের এই শৈবাল আমাদের চেনা শৈবালের মতো নয়। তার গায়ে আছে এক বিশেষ ধরণের রঞ্জক। মূলত মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে একটানা সূর্যরশ্মির হাত থেকে বাঁচতেই প্রতিরোধকের ভূমিকা পালন করে এই রঞ্জক। তবে মেরু অঞ্চলের বরফের জন্য তাই ঘাতক হয়ে উঠেছে। সূর্যের তাপকে জমিয়ে রাখে এই রঞ্জক। ফলে সেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে বরফের স্তরেও। কুকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ১০ বছরে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরের অন্তত ৩০ শতাংশ গলে যায়। আর তার মধ্যে ১৩ শতাংশ বরফ গলনের জন্যই দায়ী শৈবাল। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে বৃদ্ধি পাবে সমুদ্রের জলস্তর। উপকূল অঞ্চলের মানুষের জন্য তা যে রীতিমতো চিন্তার বিষয়, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আর তার জন্য দায়ী আণুবীক্ষণিক এক জীব। নিছক একটি শৈবাল।
Powered by Froala Editor