পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে বরফাবৃত বিস্তৃত আন্টার্কটিকা মহাদেশ। নির্দিষ্ট কিছু গবেষক ছাড়া সেখানে মানুষের পা পড়ে না বললেই চলে। আর তাই বোধহীন সেখানকার স্বর্গীয় ধূসর নীরবতা হাতছানি দেয় আমাদেরও। কিন্তু সেই নির্মল পরিবেশের মাঝেই পাওয়া গেল প্লাস্টিক। আন্টার্কটিকার পরিবেশেও থাবা বসিয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। আর তা নিয়েই চিন্তিত বিজ্ঞানীরা।
তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ মেরিন অ্যান্ড আন্টার্কটিক স্টাডিজের গবেষক আন্না কেলির সাম্প্রতিক গবেষণাকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে পরিবেশবিদদের মধ্যে। ২০০৯ সালে সংগৃহীত বরফের নমুনা পরীক্ষা করে তিনি দেখিয়েছেন সেখানে অন্তত ১৪ ধরনের মাইক্রো প্লাস্টিক উপস্থিত আছে। আর তার পরিমাণটাও নেহাৎ কম নয়। প্রতি লিটার জলে গড়ে ১২টি প্লাস্টিকের টুকরো উপস্থিত আছে তাতে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হল, এই প্লাস্টিককে ঘিরেই জন্মেছে সবুজ এবং নীলাভ শৈবাল। সমুদ্রের সরল অণুজীব ক্রিলের খাদ্য এইসব শৈবাল। ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর এই প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব যে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তবে সেই দূষণ কতটা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে এবং এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীদের শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, সেকথা জানতে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ মেরু ঘিরে থাকা এই মহাদেশের চরিত্র বাকি পৃথিবীর থেকে অনেকটাই আলাদা। ষান্মাসিক দিন ও রাত্রির যে আবর্তন ঘটে এখানে, সেখানে সাধারণ জীবজগতের বেঁচে থাকা এককথায় অসম্ভব। তাই এখানকার বাস্তুতন্ত্রও আলাদা। আর এই বিরল বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী প্রতিটা দেশই। নির্দিষ্ট কিছু গবেষক ছাড়া মানুষের প্রবেশাধিকার নেই এই মহাদেশে। তাহলে সেখানে এমন দূষক পদার্থের নমুনা মিলল কীভাবে? বিজ্ঞানীরা কী নিজেদের দিকেই আঙুল তুলবেন এবার? নাকি সামুদ্রিক দূষণের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে সেই দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে সুদূর আন্টার্কটিকাতেও?
এমনই নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে পরিবেশবিদদের বক্তব্যে। বিতর্কও শুরু হয়েছে বিস্তর। তবে এই দূষণের কারণ এবং তার সম্ভাব্য প্রতিকারের জন্য আরও খানিক গবেষণার প্রয়োজন। আর সেই কাজে একেবারেই সময় নষ্ট করতে চাইছেন না বিজ্ঞানীরা।