সমুদ্রের তলদেশে জমতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎস খুঁজতে খুঁজতে গবেষকরা ১০০টি নদীর তালিকা তৈরি করেছিলেন চলতি বছরের শুরুতেই। বিশ্বের অন্যতম দূষিত এই ১০০টি নদীর মধ্যে ছিল ভারতের গঙ্গাও। কিন্তু তার মধ্যে ঠিক কোন কোন জায়গায় এসে মিশছে প্লাস্টকজাত আবর্জনা? নদীর নিম্নপ্রবাহেই নয়, বরং একেবারে বারাণসী-হরিদ্বার-প্রয়াগ অঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া গেল মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। সম্প্রতি দিল্লির পরিবেশ সংস্থা টক্সিক লিঙ্কের এই গবেষণা রীতিমতো চিন্তার উদ্রেক করেছে। প্লাস্টিকে আবর্জনা নয়, সেই আবর্জনা ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হতে শুরু করেছে উচ্চপ্রবাহেই।
সাধারণত জল বা অন্য কোনো তরল মাধ্যমে দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে প্লাস্টিকের পলিমারগুলি অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে ভেঙে যায়। তবে পলিমারের বিয়োজন ঘটে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সেইসব প্লাস্টিকের এক একটি কণার আকার হয় ১ মাইক্রোমিটার থেকে ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। ফলে জল থেকে তাদের আলাদা করা প্রক্রিয়াটাও সহজ নয় একেবারেই। এর থেকে জলজ প্রাণীদের জীবন তো বিপন্ন হয়ই, পাণীয় জলের সঙ্গে তা মানুষের শরীরেও মেশে। তবে সাধারণত নদীর মোহনার কাছেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ এই অংশে নদীর গতিবেগ কম থাকে, তাছাড়া দীর্ঘ পথ ধরে প্লাস্টিক আবর্জনা বহন করে নিয়ে আসে নদীর স্রোত। গঙ্গার উচ্চস্রোতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা পাওয়ার অর্থ, প্লাস্টিক আবর্জনা মিশতে শুরু করেছে আরও অনেক আগে থেকেই। আর এই অংশে নদীর গতিবেগও কমেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। আর তার ফলেই প্লাস্টিক আবর্জনা দীর্ঘক্ষণ জমে থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় ভাঙতে শুরু করেছে।
ভারতের ৫টি রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদী দেশের জলসম্পদের সবচেয়ে বড়ো উৎস। ঐতিহাসিক কালপর্ব থেকেই গঙ্গা ভারতের অন্যতম পরিচিতি হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিগত ৫ দশক ধরে নদীর স্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা। সরকারের পক্ষ থেকে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, নমামি গঙ্গা প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে যে শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো কাজই হচ্ছে না, টক্সিক লিঙ্কের এই গবেষণাই তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ। আদৌ কি দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যাবে গঙ্গাকে? নাহলে যে দেশের অর্ধেক অস্তিত্বই সংকটের মধ্যে পড়বে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বারাণসীতে সবুজাভ গঙ্গা, বিষক্রিয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের