কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি লাল শালুতে মোড়া গীতায় হাত রেখে বলছে – ‘যাহা বলিব, সত্য বলিব।’ কিন্তু ‘অত বড়’ গীতা না নিয়ে এসে কেউ যদি তার ছোট সংস্করণ নিয়ে আসে? না, পকেট গীতা নয়। একদম সত্যিকারের ‘মাইক্রো শ্রীমদ্ভাগবত গীতা’!
এমন কাজটিই করেছেন ইছাপুরের মুকুল দে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই মাইক্রো গীতা লিখে চলেছেন তিনি। মূলত গীতার জন্য বিখ্যাত হলেও, অন্যান্য ‘ছোটো’ কাজও করেন তিনি। ছোলার খোলায় নিজের ডায়েরিও লিখেছেন। নিজের পাড়ায় প্রত্যেকটি মানুষ চেনেন মুকুলবাবুকে। কিন্তু হঠাৎ এই কাজ করতে ইচ্ছা হল কেন?
মেয়ের পড়ার বই বাঁধাতে গিয়ে এই বই তৈরির প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। তারপর ধীরে ধীরে সেই কৌশল আয়ত্ত করেন তিনি। ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কর্মী ছিলেন তিনি। কাজ সামলে, নিজের ঘরে গভীর রাত পর্যন্ত এই কাজে মেতে থাকতেন তিনি। আপন খেয়ালেই লিখতে শুরু করেছিলেন মাইক্রো গীতা। লিখেও ফেললেন একসময়। পরে নিজের কাজের জায়গায় প্রশংসাও পেলেন। আজ তিনি অবসর নিয়েছেন ফ্যাক্টরি থেকে। কিন্তু এই কাজ থামেনি। বরং আরও বেড়েছে।
দুই মিলিমিটার বাই চার মিলিমিটার সাইজের এই গীতা খালি চোখে পড়তে পারবেন না আপনি। তবে লেন্স লাগিয়ে দিব্যি পড়া যায় এই বই। ৯৫ পাতার এই বই রীতিমত যত্ন করে, বাঁধাই করে তৈরি করা। ভারতের নানা জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছে মুকুলবাবুর কাজ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও জায়গা করে নিয়েছে এই লেখা। এখনও অবধি ৪ হাজার মাইক্রো গীতা বানিয়েছেন তিনি। আরও বানাবেন, এই তাঁর একমাত্র ইচ্ছা। এই নেশাতেই রাতদিন কাজ করে যান মুকুল দে। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও, সৃষ্টির আনন্দেই মেতে থাকেন তিনি।