মাতৃ জঠরের দেহতরল অমরা বা প্ল্যাসেন্টা। সভ্যতার শুরু থেকেই বিশ্বাস করা হয়, এর মধ্যে শিশুভ্রূণ সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ দূষণের ছায়া পৌঁছে গিয়েছে সেখানেও। আর মাতৃজঠরের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে প্রাণঘাতী মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। সম্প্রতি রোমের সান জিওভান্নি ক্যালিবিটিয়া প্রসব হাসপাতালের চিকিৎসকদের গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর স্বাভাবিকভাবেই, আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
‘এনভার্নমেন্ট ইন্টারন্যাশানাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, ২০ জন প্রসূতির উপর পরীক্ষা করে ৪ জনের প্ল্যাসেন্টাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। আল্ট্রা-সাউন্ড টেকনোলজির মাধ্যমে প্ল্যাসেন্টার অন্যান্য অবস্থাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। যদিও প্রতিট ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের পরিমাণ ছিল বিপদসীমার নিচে। তবে মাতৃগর্ভে ১০ মাইক্রন বা তার থেকেও সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা কীভাবে প্রবেশ করল, তার সঠিক উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গবেষণাদলের সদস্য অ্যান্টোনিও রাগুসার মতে, সম্ভবত খাবারের সঙ্গেই প্রসূতির শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করেছে। আর প্ল্যাসেন্টা থেকে এই প্লাস্টিকের কণা ভ্রূণের শরীরে প্রবেশ করাও অসম্ভব নয়।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে গবেষণা শুরু হয়। এর মধ্যে ৪ জন প্রসূতিই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কোনো ক্ষেত্রেই প্রসবে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে সদ্যজাত শিশুর শরীরে কোনো দূরারোগ্য অসুখ দেখা দিয়েছে কিনা, বা জিনগত কোনো ত্রুটি আছে কিনা, সে-বিষয়ে নিশ্চিত নন গবেষকরা। পাশাপাশি, খাবারের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করার ঘটনাও খুব কম নয়। কিন্তু পরিণত শরীরে তার প্রভাব সহ্য করার ক্ষমতা বেশি। ভ্রূণের শরীরে সেই ক্ষমতা একেবারেই নেই। ফলে প্লাস্টক দূষণের প্রভাব যতটা মারাত্মক ভাবা হত, আসলে যে তার থেকেও মারাত্মক, সে-কথাই প্রমাণ হল এই গবেষণায়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দূষণে বিপর্যস্ত গভীরতম সমুদ্রের মাছেরাও, শরীরে মিলল পারদের নমুনা