মাইকেল জ্যাকসনকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসক?

২০০৯ সালের ২৫ জুন। আজ থেকে ১১ বছর আগের একটা দুপুর। সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। নিজের রোজের গতিতে চলছে পৃথিবী। হঠাৎই যেন কেঁপে উঠল গোটা জগত। না ভূমিকম্পের কোনো খবর দেখায়নি আবহাওয়া দফতর; কিন্তু এমন ঘটনাকে আর কিভাবেই বা বর্ণনা করা যায়! শুধু আমেরিকা বা লস অ্যাঞ্জেলেস নয়; গোটা পৃথিবীর নজর টিভি আর ইন্টারনেটে। তখন একটাই খবর ঘুরছে লোকের মুখে— মাইকেল জ্যাকসন আর নেই! 

গোটা পৃথিবীকে একপ্রকার স্তব্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল যে মানুষগুলোর মধ্যে, মাইকেল জ্যাকসনের নাম নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবেন। একটা মৃত্যু গোটা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো। ‘কিং অফ পপ’ এভাবে কেন উইকেট হারিয়ে ফেললেন? কয়েকদিনের মধ্যেই লন্ডনে তাঁর মঞ্চে ওঠার কথা ছিল। তাঁকে সামনে থেকে দেখার আশায় দিন গুনছিলেন কোটি কোটি ভক্ত। আর তার মধ্যেই কিনা ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন ‘এমজে’? মানতে পারেননি কেউই… 

আর এমন মুহূর্তেই উঠে আসে নানা সন্দেহ। সত্যিই কি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল মাইকেলের? অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার ফলেই মৃত্যু? নাকি আত্মহত্যা, অথবা অন্য কিছু? নানা তর্ক চলতেই থাকে। এমনকি মৃত্যুর আগের দিন, অর্থাৎ ২৪ তারিখেও দিব্যি রিহার্সাল করেছিলেন বলেও জানান ম্যাজিশিয়ান এড আলোন্সো। ২৫ তারিখ সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রাসাদোপম ঘরের বেডরুম থেকে অচৈতন্য অবস্থায় মাইকেলকে উদ্ধার করেন তাঁরই ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মারে। তখনও প্রাণ ছিল দেহে। কিন্তু পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ডাকতেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছু সময়। আর সেটাই কাল হল। মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে ঢলে পড়লেন কিংবদন্তি এই মিউজিশিয়ান। 

এরপর চলতে থাকে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া। সাফল্যের চূড়ায় উঠলেও কোথাও একাকিত্ব সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল মাইকেল জ্যাকসনের। তার ওপর একের পর এক অভিযোগের আঙুল উঠতে থাকে তাঁর দিকে। আর সেসবই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় মাদকের দিকে। পুলিশ যখন তাঁর বাড়িতে ঢোকে, তখন দেখা যায় চারিদিকে ছন্নছাড়া জিনিসপত্র। এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে জামা, ওষুধের শিশি আরও নানা জিনিসপত্র। বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন হচ্ছিল। এরই মধ্যে চলে আসে অটোপ্সি রিপোর্ট। যেখানে বলা হয় কোনোরকম ট্রমার কারণে মাইকেলের মৃত্যু হয়নি। তাঁর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিও যথেষ্ট সবল ছিল। ওজন কমা নিয়ে একটা বিতর্ক ওঠে। এর পাশাপাশি জোরালোভাবে উঠে আসে ড্রাগের ভূমিকা। এবং সন্দেহজনক হয়ে ওঠে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মারে’র ভূমিকা। কারণ, যখন মাইকেলকে নিজের বিছানায় অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান, তখন হার্ট পাম্প করতে থাকেন তিনি। জানা যায়, তিনি সঠিক পদ্ধতিতে পাম্প করছিলেন না। 

আরও পড়ুন
একদিনে কলকাতায় আত্মঘাতী ৭, মানসিক অবসাদ না অন্য কিছু?

 

আরও পড়ুন
‘বরাবর লড়াকু মানসিকতাই দেখেছি সুশান্তের মধ্যে’, বলছেন সহ-অভিনেতা ডঃ কৌশিক ঘোষ

এর মধ্যেই উঠে আসে আরও দুটো নাম— প্রপোফল এবং লোরাজেপাম। দুটোই অত্যন্ত ক্ষতিকারক ড্রাগ; আর এই দুটোই নাকি মাদক হিসেবে ব্যবহার করতেন মাইকেল! তাহলে কি এর ফলেই মৃত্যু? ক্রমশ জোরালো হয় সন্দেহ। তাহলে কি নিজেকেই শেষ করেছেন এমজে? আদালতে দাঁড়িয়ে তেমনটাই বলেছিলেন ডাঃ কনরাড মারে। তদন্তে এও জানা যায়, এই সমস্ত ড্রাগ মাইকেলের কাছে পৌঁছে দিতেন মারেই। জীবনের শেষ সময়গুলোতে ডাঃ মারেকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করতেন না তিনি। সেটাই কি কাল হল? 

আরও পড়ুন
লকডাউন উঠলেও থেকে যাবে মানসিক বদ্ধতা, জানাচ্ছেন অম্বরীশ দাসগুপ্ত

শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন না করার জন্য ‘অনিচ্ছাকৃত খুনের’ অপরাধে ডাঃ কনরাড মারেকে চার বছরের কারাবাসে পাঠানো হয়। কিন্তু ক্ষতি হতে পারে জেনেও কেন বারবার মাইকেলকে ওষুধ পৌঁছে দিতেন তিনি? কেন তাঁকে রক্ষা করতে পারলেন না, যেখানে তিনিই ছিলেন মাইকেলের অন্যতম কাছের জন? বারবার এই প্রশ্নগুলোই নিয়ে আসা হয়। আর এর পেছনেই মুনওয়াক করে হেঁটে বেরিয়ে যান মাইকেল। আমাদের সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান এক নিমেষে…  

আরও পড়ুন
দেওয়া হল ইলেকট্রিক শকও, ব্রিটিশ পুলিশের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারালেন উল্লাসকর দত্ত

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ, কোপ পড়ছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও

More From Author See More