“আমার বয়স ১৮। আমি একটা কাজ চাই।” অথবা, “আমি তিন সন্তানের সিঙ্গল মাদার। একটা যেকোনো কাজ হলেই চলবে।” মেক্সিকোর অসংখ্য তরুণ তরুণীর সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল খুললেই খুঁজে পাওয়া যাবে অসংখ্য পোস্ট। কোনো সংস্থা থেকেই কোনো উত্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমের দ্বারস্থ হচ্ছে মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্ম। একটা যেকোনো কাজ, একটু আয়ের উৎস, যাতে অন্তত খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারেন। এটুকুই চাহিদা। করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতির ধাক্কা যে উন্নত দেশগুলির গায়েও এসে লেগেছে, সেটাই প্রমাণ করে মেক্সিকোর বাস্তবতা।
সরকারি রিপোর্ট বলছে, মেক্সিকোতে কর্মচারীদের সংগঠিত ক্ষেত্র বলতে প্রায় কিছুই নেই। নেই সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থাও। আর এই নয়া-উদারবাদী অর্থনীতিই ডেকে এনেছে চূড়ান্ত বিপদ। কোভিড প্রতিরোধের জন্য লকডাউইন শুরু হতেই দেশের অর্থনীতি ব্যাপক মন্দার মুখে পড়ে। সমস্ত ক্ষেত্রেই আয় প্রায় শূন্যে নেমে আসে। এই অবস্থায় সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মচারীদের জন্য সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিলেও তার প্রভাব কার্যত শূন্য। কারণ প্রায় সমস্ত মানুষ কাজ করেন অসংগঠিত শ্রমিক হিসাবে। সে দিনমজুর হোক বা উচ্চপদস্থ কর্মচারী। তাঁদের কাছে কোনো ব্যবস্থাই পৌঁছয়নি। ধীরে ধীরে শেষ হয়েছে যাবতীয় সঞ্চয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব শেষ হয়নি।
অবশ্য বিগত তিনমাস ধরে মেক্সিকোর অর্থনীতি ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের সময় থেকেই কর্মসংস্কৃতি এমন এক স্রোতে গা ভাসিয়েছে, যাতে স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী নিয়েই কাজ চালানো যায়। তাই বেকারত্বের সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। আর এই সমস্যার সবচেয়ে ভুক্তভোগী ১৮ থেকে ২৯ বছরের তরুণ-তরুণীরা। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংস্থার সঙ্গে কমদিন যুক্ত থাকার কারণে ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁদেরই। এমনকি অভিজ্ঞতা কম থাকার অজুহাতে পাচ্ছেন না নতুন কাজও। একের পর এক সংস্থার দপ্তরে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে তাই শেষ পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা। একটাই দাবি, একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন না। বয়স কম, তাই কাজের অভিজ্ঞতাও কম। কিন্তু একটা সুযোগ পেলে নিশ্চই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে দিতে পারবেন। জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে একটু উপার্জন যে খুব জরুরি!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আপোসের চেয়ে বেকারত্ব ভালো, আন্দোলনের প্রস্তুতি ব্রিটেনের গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারদের