অ্যালকেমিস্টদের যুগ থেকেই অমরত্বের সন্ধান করে চলেছে মানুষ। কিন্তু কথায় আছে, ‘জন্মিলে মরিতে হবে…’। এই অমোঘবাণীকে খণ্ডানোর সাধ্য হয়ে ওঠেনি সভ্যতার। তবে এবার অস্থি-মাংসের মানবদেহে অমরত্ব না দিতে পারলেও, মানুষকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখার (Immortality) আশ্বাস দিল প্রযুক্তি। সশরীরে নয়, বরং ভার্চুয়াল জগতেই এবার অমরত্ব পাবে মানুষ। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর ঘোষণা করল মেটাভার্স (Metaverse) সংস্থা ‘সোমনিয়াম স্পেস’ (Somnium Space)।
অন্যান্য প্রযুক্তি সংস্থার মতোই, বছর কয়েক আগেই বিশ্বজুড়ে ব্যবসার জাল বিছিয়েছিল ‘সোমনিয়াম স্পেস’-খ্যাত বহুজাতিক সংস্থাটি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য-সহ একাধিক দেশে ভিআর হেডসেট এবং থ্রি-ডি টেকনোলজির মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতের অভিজ্ঞতা পৌঁছে দিচ্ছে বহুজাতিক সংস্থাটি। এবার এই তালিকায় যুক্ত হবে স্পর্শের অনুভূতিও। শুধু তাই নয়, মানুষের প্রতিটি অনুভূতিকেই ট্র্যাক করবে ‘সোমনিয়াম স্পেস’ মেটাভার্সের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
ব্যক্তি বিশেষে বদলে যায় কথা বলার ধরন, গলার স্বর, গতিবিধি, আচার-আচরণ এমনকি যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়াও। আর এই সবকিছুর ওপরেই নির্ভর করে একজন মানুষের চরিত্র। মূলত, গ্রাহক অর্থাৎ মেটাভার্স ব্যবহারকারীদের এই সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকেই তথ্য হিসাবে সংগ্রহ করবে এই সংস্থার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। পাশাপাশি এই বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতিলিপি তৈরি করে, তা সংরক্ষিত করা হবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ব্যবহারকারীর অবতারের মধ্যে।
ব্যবহারকারীর অবর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠবে প্রক্রিয়াজাত এই তথ্যগুলিই। তাদের ভিত্তিতেই নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে মৃত ব্যক্তির ভার্চুয়াল অবতার। অন্য কোনো ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলতে পারবে সাবলীলভাবেই। অঙ্গভঙ্গি, চোখের পলক, বাচনভঙ্গি দেখে বোঝবার উপায় থাকবে না যে আদতে তা কেবলমাত্র কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।
আরও পড়ুন
মেটাভার্সেও জিএসটি দিতে হবে ব্যবহারকারীদের! জানাচ্ছে সাম্প্রতিক রিপোর্ট
ইতিমধ্যেই ‘টেসলাসুইট’-খ্যাত আরও একটি প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধেছে বহুজাতিক মেটাভার্স সংস্থাটি। তাদের দৌলতে ভার্চুয়াল দুনিয়ার অবতার দৃশ্যতও হয়ে উঠবে মানুষের মতোই। গ্রেড-বায়োমেট্রিক স্ক্যানারের মাধ্যমে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের রূপকে অনেকটা সিজিআই প্রযুক্তির মতোই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ফুটিয়ে তুলবে এই সংস্থাটি।
আরও পড়ুন
মেটাভার্সে একের পর এক দুর্ঘটনা, উঠছে প্রশ্ন
‘সোমনিয়াম স্পেস’-এর নির্মাতা আর্থার সাইকোভ জানাচ্ছেন, তাঁদের মেটাভার্সে আগামীদিনে তথ্য সংগ্রহের এই বৈশিষ্ট্য চালু থাকবে স্বতন্ত্রভাবেই। তবে চাইলে ব্যবহারকারী তা বন্ধ করে রাখতে পারেন। এই প্রযুক্তির দৌলতে আগামীদিনে প্রয়াত প্রিয়জনদের সঙ্গে ভার্চুয়াল জগতে সময় কাটাতে পারবেন মানুষ। এমনকি স্পর্শের অনুভূতিও পাবেন তাঁরা। আর এই অমরত্বের মূল্য? প্রতি বছর ব্যবহারকারী পিছু ৫০ ডলার চার্জ করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। অবশ্য, ভবিষ্যতে স্টোরেজের খরচার ওপর ভিত্তি করে বাড়তে পারে এই মূল্য। এমনটাই জানাচ্ছে সংস্থার কর্তৃপক্ষ…
আরও পড়ুন
হগওয়ার্টসে বিবাহ, মেটাভার্সের অভিনব ব্যবহার ভারতে
Powered by Froala Editor