চন্দ্রপৃষ্ঠে রয়েছে বিপুল পরিমাণ খনিজ, জন্মের ইতিহাস নিয়েও নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু

রাতের আকাশের দিকে তাকালে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা যায় যাকে, সে আমাদের অতি পরিচিত উপগ্রহ চাঁদ। প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর চারিদিকে অনবরত ঘুরে চলেছে চাঁদ। কিন্তু কোত্থেকে এল এই উপগ্রহটি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এখনও হিমশিম খান বিজ্ঞানীরা। যদিও অনেকগুলো তত্ত্বের অবতারণা ইতিমধ্যে করা হয়েছে, কিন্তু সেই সব তত্ত্বকেই প্রায় নাকচ করে দেয় সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য। আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্সের সাম্প্রতিক সংখ্যা তাই রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।

আসলে বিজ্ঞানীরা এতদিন মনে করতেন পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়া ধুলো জমাট বেঁধেই চাঁদের উৎপত্তি। হয়তো কোনো উল্কা বা ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলেই এমনটা ঘটেছিল। কিন্তু নাসার লুনার রেকনেইসেন্স অর্বাইটারের মিনিয়েচার রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি ইনস্ট্রুমেন্টের দেওয়া তথ্য অন্য কথা বলছে। দেখা গিয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠের গর্তের মধ্যে বেশ অধিক পরিমাণেই সঞ্চিত আছে লোহা, নিকেল এবং অন্যান্য ভারী ধাতু। চাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধাতুর অস্তিত্বের কথা আগেই জানা ছিল। কিন্তু তার পরিমাণ সত্যিই অবাক করে। অন্তত পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ধাতুহীন ধুলো থেকে চাঁদের জন্ম হতে পারে না বলেই মনে করছেন অনেকে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মহাকাশবিজ্ঞানী এসাম হেগের কথায়, সাম্প্রতিক তথ্যের প্রেক্ষিতে শুধু মনে হয় আমরা আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী সম্বন্ধে কত কম জানি!

তবে চন্দ্রপৃষ্ঠে ধাতুর আধিক্যের পিছনে আরও নানা কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। হয়তো পৃথিবীর গরম ধুলো ক্রমশ ঠান্ডা হওয়ার সময়েই এইসব ধাতুর জন্ম হয়েছে। অথবা অন্য কোনোভাবে এসেছে ধাতুর সঞ্চয়। তবে আপাতত সবটাই অনুমানমাত্র। সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে আরও অনেক তথ্য প্রয়োজন। তাই ইতিমধ্যে চাঁদের ভূত্বকের নিচে কতটা ধাতুর সঞ্চয় আছে, সেবিষয়ে খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা কেবল চাঁদের উত্তর গোলার্ধের। দক্ষিণ গোলার্ধেও কি একই পরিমাণ ধাতু মজুত আছে? অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সব কিছুই। আর তারপর হয়তো চাঁদের উৎপত্তি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য রাখা সম্ভব। এবং সেইসঙ্গে সৌরজগতের আরও দুই শতাধিক উপগ্রহের উৎপত্তি সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

Powered by Froala Editor

Latest News See More