২০১৯ সালের কথা। কাঠমাণ্ডুতে আয়োজিত সাউথ এশিয়ান গেমসে ভারতকে সোনা এনে দিয়েছিলেন তিনি। এবার দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে স্থাপন করলেন আরও এক মাইলফলক। মেহুলি ঘোষ (Mehuli Ghosh)। আজ সকালেই দক্ষিণ কোরিয়ার চ্যাংওনে আয়োজিত শ্যুটিং বিশ্বকাপে (ISSF World Cup) সোনার স্বাদ পেলেন বাঙালি তারকা। উল্লেখ্য, সিনিয়র বিশ্বকাপে এই তাঁর প্রথম স্বর্ণপদক-জয়।
১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিক্সড বিভাগে এদিন তুষার শাহুর সঙ্গে জুটি বেঁধে শ্যুটিং রেঞ্জে নেমেছিলেন মেহুলি। ফাইনালে মুখোমুখি হতে হয়েছিল হাঙ্গেরির মেসজারোস-ইস্তোভান জুটির সঙ্গে। প্রথম রাউন্ডে পিছিয়ে পড়লেও ক্রমশ ম্যাচে ফেরেন মেহুলি-তুষার। অনবদ্য লড়াইয়ে বদলে দেন ম্যাচের স্কোরবোর্ড। ১৭-১৩ পয়েন্টে ছিনিয়ে আনেন সেরার শিরোপা।
“কোভিডের জন্য একটা দীর্ঘসময় প্র্যাকটিস বন্ধ হয়ে ছিল। প্রত্যেক অ্যাথলিটকেই একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই সময়টায়। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর আবার রেঞ্জে ফিরি। কোচ এবং ট্রেনাররা সবরকমভাবে সাহায্য করেছেন। সেই পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছি”, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফোনে জানালেন মেহুলি। তাঁর কথায় স্পষ্ট উঠে এল, লকডাউন যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে তাঁর কেরিয়ারে। তবে কোরিয়ায় তাঁর সোনাজয়ই প্রমাণ করে দিল, ক্রমশ চেনা ফর্মে ফিরে আসছেন তিনি।
শুধু মিক্সড বিভাগেই নয়। দক্ষিণ কোরিয়াতেই আরও একটি পদকজয়ের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে মেহুলির। ইতিমধ্যেই ভারতীয় মহিলা দল পৌঁছে গেছে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে। সেই দলেই রয়েছেন তিনি। আগামীকাল সকাল ১০টায় কোরিয়ার বিরুদ্ধে রেঞ্জে নামতে চলেছে ভারতের মহিলা দল।
আগামী অক্টোবর মাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও লড়াই করতে যাবেন মেহুলি। উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতায় রয়েছে অলিম্পিক কোটাও। সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতায় পদক জিততে পারলে, ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের জায়গা পাকা করে ফেলতে পারবেন তিনি। সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী তাঁর কোচ বিবস্বান গঙ্গোপাধ্যায়ও। জানালেন, “কোরিয়ায় মেহুলির সোনাজয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।” এই জয় অনেকটাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে বাঙালি তারকার, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। গতবছর থেকে হায়দ্রাবাদে অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মেহুলি। মেন্টর হিসাবে পেয়েছেন কিংবদন্তি শ্যুটার গগন নারাং-কে। ভিনরাজ্যে প্রশিক্ষণ চ্যালেঞ্জিং হলেও, সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে গেছেন মেহুলি। তাঁর কথায়, “নতুন কোনো জায়গায় প্রথম কয়েকদিন সকলেরই অসুবিধা হয়। তবে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে আমি মানিয়ে নিয়েছি নিজেকে।” পিছনে ফিরে তাকাতে নারাজ তিনি। সামনেই রয়েছে বেশ কয়েকটি বড়ো প্রতিযোগিতা। জানালেন, দেশে ফিরেই আবার অনুশীলনে নামবেন।
তবে শুধু মেহুলিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে ভারতীয় দল। টোকিও অলিম্পিকে ভারত শ্যুটিং-এ পদক আনতে ব্যর্থ হলেও আশাবাদী কোচ বিবস্বান গঙ্গোপাধ্যায়, “টোকিও অলিম্পিকের ভারতীয় দলকে এখনও পর্যন্ত সেরা দল বলা চলে। তাছাড়াও বহু তরুণ তারকা উঠে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ধারাবাহিক সাফল্যও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।” ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে ভারতকে সোনা এনে দিয়েছিলেন শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রা। তারপর পেরিয়ে গেছে ১২ বছর। সেই অপেক্ষারই অবসান হতে পারে খুব শীঘ্রই। অলিম্পিকে পদকের দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ভারতীয় দল, স্পষ্ট হয়ে উঠছে সেই সম্ভাবনাই…
Powered by Froala Editor