কালোবাজারি এবং ভেজাল ওষুধে ছেয়ে গিয়েছে দেশ, আতঙ্কিত চিকিৎসকরা

হাসপাতালের সামনে চঞ্চলভাবে ঘোরাফেরা করছেন বহু মানুষ। প্রতীক্ষায় আছেন, এবার বোধহয় ওষুধ এসে পৌঁছবে। হাসপাতালে তখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আত্মীয়। এক ডোজ ওষুধ পড়লেই খানিকটা স্বস্তি পাবেন। কিন্তু হাসপাতালে যে ওষুধের জোগান নেই। তাই বাধ্য হয়েই যোগাযোগ করতে হচ্ছে কালোবাজারে। কিন্তু সেই ওষুধ যখন এসে পৌঁছচ্ছে, তখন হয়তো রোগী যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছেন। অথবা আগে থেকে মূল্য দেওয়া সত্ত্বেও এসে পৌঁছলো না ওষুধ। শুধুই ওষুধ কেন, দেশজুড়ে জোগান নেই অক্সিজেন অথবা হাসপাতালের শয্যারও। করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে এমনই বিপর্যস্ত দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। সেইসঙ্গে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্নও।

চিকিৎসকদের মতে, রোগীদের নিজেদের ওষুধ সংগ্রহ করতে বলা এক বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত। রেমিডিসিভার বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার থাকে। চিকিৎসকদের সবসময় সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু যখন হাসপাতালে ওষুধের জোগান নেই, তখন তো আর কোনো পথ নেই। অতএব এই চাহিদাকে ঘিরেই গজিয়ে উঠছে কালোবাজারি। রেমিডিসিভারের এক একটি ভায়াল সেখানে বিক্রি হচ্ছে অন্তত ২০ গুণ বেশি মূল্যে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের দামও আকাশছোঁয়া। কোথাও কোথাও এক একটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকাতেও। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিই দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। তবু সমস্ত সম্বলের বিনিময়ে জীবনটুকু বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন মানুষ। তাও সম্ভব হচ্ছে না। বেশি মূল্যেও যে ওষুধ পাচ্ছেন, কখনো দেখা যাচ্ছে তার সময়কাল অতিক্রান্ত। কখনো মিলছে ভেজাল ওষুধ। জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই কালোবাজারি।

রেমিডিসিভার বা স্টেরয়েডের জোগান নেই। একথা জেনে অনেক সময় চিকিৎসকরা বিকল্প ওষুধের পরামর্শও দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, কোনোভাবেই কোভিড আক্রান্ত রোগীকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া যাবে না। আইভারমেকটিনের ক্রিয়াও এখনও প্রমাণিত নয়। অথচ চিকিৎসকরা বাধ্য হচ্ছেন এই দুই ওষুধ প্রয়োগ করতে। কারণ এখনও এগুলির জোগান মোটামুটি রয়েছে। তবে সামগ্রিক অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। ২০২০ সালের শেষে দেশের ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি জানিয়েছিল, তাঁরা অন্যান্য দেশকে ওষুধ দিয়ে সাহায্য করার জন্যও প্রস্তুত। উৎপাদন নাকি এতটাই বাড়িয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় দেখা গেল, নিজের দেশেই জোগান নেই। অধিকাংশ ওষুধ ততদিনে সময়কাল পেরিয়ে গিয়েছে। তবে দ্বিতীয় তরঙ্গের আভাস তো ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। তখন থেকে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নও তুলছেন চিকিৎসকরা। মার্চের শেষে এসে যখন মৃত্যুমিছিল বাড়তে শুরু করেছে, তখন হুঁশ ফেরে ওষুধ নির্মাতাদের। এতদিনে কি সরকারও ব্যবস্থা নিতে পারতেন না?

একদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। সরকারের বক্তব্য, দেশের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা  সর্বতোভাবে প্রস্তুত। অথচ বাস্তব ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য। মহামারী পরিস্থিতিতেও মানুষের জীবনের মূল্য কত সামান্য, সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। তবু এই সবকিছুর মধ্যে মানুষই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমের সূত্রে গড়ে উঠছে এক ব্যতিক্রমী চ্যানেল। হাসপাতালের শয্যা থেকে ওষুধ অথবা অক্সিজেনের সন্ধান খুঁজছেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বাড়িতেই অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেশন যন্ত্রে উৎপাদন শুরু করেছেন। এই বিষাদময় পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগগুলিই আশার আলো দেখাচ্ছে।

আরও পড়ুন
এপ্রিল থেকে ২০% দাম বাড়ছে ওষুধের, সবুজ সংকেত দিল কেন্দ্র

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাঙালিদের কাছে পৌঁছে দেবেন ওষুধ; পাক বিমান অপহরণের চেষ্টা ফরাসি যুবকের