উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কথা ভাবেন অনেকেই। তবে তখন সিলেবাসের ব্যাপ্তি তো থাকেই, আর তার সঙ্গে থাকে ভাষাগত সমস্যাও। আমাদের দেশের অধিকাংশ পড়ুয়ারই স্কুলজীবন কাটে মাতৃভাষায় শিক্ষার মাধ্যমে। সেখানে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে ইংরেজিতে পড়াশোনায় সমস্যায় পড়েন অনেকেই। পড়ুয়াদের এই সমস্যাটি নিয়েই এবার পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
ইতিমধ্যে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে হিন্দি মাধ্যমে পাঠক্রম শুরু হবে। এই পরীক্ষা সফল হলে দেশের অন্যান্য রাজ্যেও একই পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আর্য সামন্ত বলছেন, “আমরা তো সব সময় পড়াশোনার জন্য নিজের রাজ্যে আটকে থাকি না। সেক্ষেত্রে মাতৃভাষা নির্ণয়ের মাপকাঠি কী হবে?” প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ঋতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের দেশ তো ফ্রান্স বা জাপানের মতো এক ভাষার দেশ নয়। সেখানে কাজটা সহজ। কিন্তু এখানে তার সাফল্য সম্পর্কে সন্দেহ থেকেই যায়।” তাঁর মতে, “রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র প্রত্যেকেই মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার কথা বলে গিয়েছেন। কিন্তু সেটাই বাধ্যতামূলক করে ফেলা হলে মুশকিল। এখন দেখা যাক সরকার কীভাবে পদ্ধতিটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।”
আর্য সামন্তের কথাতেও উঠে এল সেই একই কথা। “আমরা তো চিকিৎসার প্রয়োজনেও নানা জায়গায় যাই। সেখানে মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হয়। আঞ্চলিক ভাষা শিখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু ভারতের তো একটা কথ্য ভাষা নয়। আলাদা করে মাতৃভাষায় জোর দিলে সমস্যাই হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের এক অধ্যাপক বলেন, “আমাদের অনেক পড়ুয়াই তো বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে এসেছেন। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হলেও সবাই কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এখন মাতৃভাষায় পাঠক্রম শুরু হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় বই থেকে শুরু করে সমস্ত পরিকাঠামো সাজিয়ে তোলার সমস্যা প্রচুর।”
আবার বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দিতে ডাক্তারি শুরু হওয়ায় হিন্দি আগ্রাসনের দিকেও নজর টানতে চাইছেন অনেকে। তবে সবারই চোখ এখন পরীক্ষার ফলাফলের দিকে। আদৌ কি সফল হবে এই উদ্যোগ?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভাসমান হাসপাতালেই চিকিৎসা, বরিশালের নদীতে দুঃস্থদের পাশে চার চিকিৎসক