সংক্রমণে স্মৃতিক্ষয়, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও নষ্ট করতে পারে হাম!

সংক্রামক রোগের হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় অবশ্যই ভ্যাকসিন। আবার একবার সংক্রমণ হয়ে গেলেও সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তখন নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। কিন্তু সবসময় এই হিসাব মেলে না। বিশেষ করে যখন মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে শূন্যে নেমে আসে। আগের সমস্ত সংক্রমণের স্মৃতি ভুলে যায় শরীর। এমনকি আগে নেওয়া ভ্যাকসিনের স্মৃতিও হারিয়ে যায়। না, স্মৃতি বলতে ঘটনাটি মনে থাকার কথা নয়। শরীর আর সেই জীবাণুদের চিনতে পারে না। ‘ইমিউন অ্যামনেসিয়া’ (Immune Amnesia) নামের এই সমস্যাকে ঘিরে রীতিমতো চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। আর এর জন্য দায়ী অত্যন্ত সাধারণ একটি রোগ, হাম (Measles)।

হাম রোগটি মানুষের অপরিচিত নয় একেবারেই। প্রায় ২৫০০ বছর আগে গবাদি পশুর শরীর থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল এই রোগ। তবে সারা পৃথিবীতে তখনই ছড়িয়ে পড়েনি। আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ বিস্তারের সময় সেখানকার আদি অধিবাসীদের ৯০ শতাংশই বিনা যুদ্ধে মারা যান। আর তার কারণ ছিল ইউরোপীয়দের সঙ্গে চলে আসা হাম এবং অন্যান্য বায়ুবাহিত ভাইরাস। ১৯৬৭ সালে হামের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মনে করা হত, ১৫ বছর বয়সের আগে সবারই হাম হয়। খুবই সাধারণ রোগ, অথচ এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এমনকি হাম আক্রান্ত হওয়ার পরে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকখানি বেড়ে যায়। এমনটাও বহুদিন থেকেই দেখে আসছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তাই নিয়ে এক দশক আগেও স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না।

দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসকরা সন্দেহ করেছিলেন, বায়ুবাহিত ভাইরাস হলেও হামের কারণে শুধু ফুসফুস আক্রান্ত হয় না। তাহলে কোন কোন অংশ আক্রান্ত হয়? ২০০২ সালে জাপানি বিজ্ঞানীদের একটি দল সেটাই পরীক্ষা করে দেখতে চায়। আর তাতেই ধরা পড়ে, হামের ভাইরাস সবার আগে আমাদের টি-লিম্ফোসাইট কোষ নষ্ট করতে শুরু করে। এরপর নতুন করে যে টি-লিম্ফোসাইট কোষ তৈরি হয়, তা হামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়। কিন্তু পূর্ববর্তী সংক্রমণের স্মৃতি হারিয়ে যায়। অবশ্য ২০০২ সালের এই গবেষণা অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাননি। ঠিক ১০ বছর বাদে, ২০১২ সালে বিষয়টি নিয়ে আবার গবেষণা শুরু হয়। এর মধ্যেই ২০১৩ সালে নেদারল্যান্ডে হামের মহামারী দেখা দেয়। ফলে গবেষণার নমুনা সংগ্রহ করাও সহজ হয়। জাপানি বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তই প্রমাণিত হয় শেষ পর্যন্ত। 

আজও বেশিরভাগ ভ্যাকসিন জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ে নেওয়া দস্তুর। অথচ এরপর একবার হাম হলেই সেই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা শূন্যে নেমে আসতে পারে। এর সমাধান কীভাবে সম্ভব, তাই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন
দাবানলে ‘উজাড়’ কানাডার শহরের স্মৃতি ফিরল কপ-২৬ সম্মেলনে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্মৃতি থেকে মোছেনি জীবনের একটি মুহূর্তও; বিরল ক্ষমতা, নাকি অসুস্থতা?