এশিয়াটিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরার শিরোপা পেল ‘মায়ার জঞ্জাল’, যৌথ কৃতিত্ব দুই বাংলারই

বেশ কয়েক বছর পর আবার সাফল্যের মুখ দেখল বাংলা সিনেমা। ইতালিতে আয়োজিত ২১ তম এশিয়াটিক ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পেল ‘মায়ার জঞ্জাল’। যদিও এশিয়াটিকা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল এই সিনেমার ইংরাজি-ডাবড ভার্সান ‘ডেব্রিস অফ ডিজায়ার’। উল্লেখ্য, পূর্ব ও পশ্চিম— দুই বঙ্গের যৌথ প্রযোজনায় প্রকাশিত হয়েছিল এই সিনেমা। প্রযোজনা করেছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা জোসিম আহমেদ এবং ভারতীয় প্রযোজনা সংস্থা ফ্লিপবুক।

গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল এশিয়াটিক চলচ্চিত্র উৎসব। ২৩ তারিখ বুধবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয় এই উৎসবের। সেরা ফিচার ফিল্ম বিভাগে প্রাথমিকভাবে ৮টি সিনেমাকে বেছে নিয়েছিলেন বিচারকরা। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে পুরস্কৃত করা হয় ‘মায়ার জঞ্জাল’-কে।

দীর্ঘ ৫ বছর পর সিনেমার কাজে ফিরেছিলেন পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। আর তাতেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রমহলে বাজিমাত করেন তিনি। বাংলা কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটোগল্প— ‘বিষাক্ত প্রেম’ এবং ‘সুবলা’-র অবলম্বনে তৈরি এই চলচ্চিত্র। অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপি করিম, ব্রাত্য বসু, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, সোহেল রাণা প্রমুখ। 

‘মায়ার জঞ্জাল’ মূলত ক্রাইম থ্রিলার। অসাধারণ সিনেম্যাটোগ্রাফি, গল্পের বুনোট এবং অভিনয়— নজর টেনেছিল সিনেমার সবকিছুই। সিনেমার মূল চরিত্র সত্য’র প্রেমিকা সোমা বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী। পেশা দেহব্যবসা। বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁর অর্থ এবং গয়না চুরি করার ফাঁদ বোনে সত্য। অন্যদিকে অর্থের অভাবে গল্পের আরেক চরিত্র এটিএমের প্রহরী চাঁদু জড়িয়ে পড়ে ড্রাগ ব্যবসায়। চাঁদুর থেকে কেনা ড্রাগকে হাতিয়ার করেই সোমাকে কবজায় আনতে চায় সত্য। তবে শেষ অবধি সোমার প্রাণহানির আশঙ্কা বাধ্য করে সত্যকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে। সেই সিদ্ধান্তই যেন বদলে দেয় সকলের জীবন। অনিশ্চয়তা, অর্থাভাব, অপরাধ ঘুরপাক খেতে থাকে গোটা সিনেমার প্রেক্ষাপট-জুড়ে। প্রতিফলিত হয় বর্তমান বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ছবি। উঠে আসে বাস্তব জীবনের কঠিন লড়াই।

২০১৩ সালে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক হয়েছিল পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর। তাঁর তৈরি বাংলা চলচ্চিত্র ‘ফড়িং’ রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল দর্শক মহলে। এরপর ‘একটি বাঙালি ভূতের গল্প’ এবং ‘ভালোবাসার শহর’ নামের দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানালেও ‘মায়ার জঞ্জাল’-ই তাঁর দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম। পাশাপাশি ২০১৫ সালের পর সিনেমার জগতে আবার তাঁর প্রত্যাবর্তন শুরুতেই উপহার এনে দিল বাংলাকে।

এশিয়াটিক ফিল্ম ফেস্টিভাল ছাড়াও মস্কো, জোগজা-নেটপ্যাক, সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবেই সমাদৃত হয়েছিল ‘মায়ার জঞ্জাল’। তবে শেষমেশ বড়ো সাফল্য এল বছরের শেষে। এশিয়াটিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার বাংলা সিনেমাকে ফিরিয়ে দিল তার হারানো গৌরব। যার কৃতিত্ব দুই বাংলারই...

আরও পড়ুন
আবারও নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন দক্ষিণ কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা কিম কি-দুক

Powered by Froala Editor

More From Author See More