বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে রাজ্যের রোল-মডেল পোলিওজয়ী মায়া চক্রবর্তী

মাত্র ৩ বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিল মায়া। তারপর স্বাভাবিকভাবেই হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। তার বয়সী অন্য ছেলেমেয়েরা যখন দৌড়োদৌড়ি করে খেলত, তখন মায়া একা বসে থাকত জানলার ধারে। “জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছিলাম। মায়ের একার দায়িত্বে সংসার। আমরা তখন খুব গরিব ছিলাম। তবুও মা নানা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে আমাকে। এমনকি আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও করিয়েছে। কিন্তু হাঁটতে পারিনি আমি।” প্রহরকে বলছিলেন মায়া চক্রবর্তী। আর আজ রাজ্য নারী ও সমাজকল্যাণ দপ্তর থেকে রোল মডেল হিসাবে পুরস্কার পেতে চলেছেন মায়া।

তবে এখন সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন মায়া। শুধু তাই নয়, নার্স হয়ে তিনি এখন তাঁর মতোই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের পরিচর্যাও করেন। আর সম্প্রতি তাঁর শুশ্রূষাতেই ১০ বছরের আলিশা করোনা থেকে সেরে উঠেছে। মায়ার কথায়, “আলিশার মস্তিষ্কের ৯০ শতাংশই কাজ করে না। সবসময় তার একজন সঙ্গী দরকার হয়। কিন্তু করোনার কারণে তাকে আইসোলেশনে থাকতে হয়েছিল। ডাক্তারদের পরামর্শ মতো আলিশার সেবা করে তাকে সুস্থ করতে পেরে আমি সত্যিই খুশি।” মূলত এই কাজের জন্যই তাঁকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে।

তবে মায়ার জীবনের লড়াইয়ও তো খুব সহজ ছিল না। টাকার জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করতে চলে যেতেন মায়া। সারাদিন একাই থাকতে হত তাকে। এমন সময় মায়ার বয়স যখন ৯, তখন এক প্রতিবেশী মারফত উলুবেড়িয়ার আশা ভবন সেন্টারের কথা জানতে পারেন মায়ার মা। আর তারপর থেকেই সেখানে আবাসিক হয়ে যান মায়া। তাঁর কথায়, “এখানেই আমি প্রথম বন্ধুত্বের স্বাদ পাই। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বড়ো মাসি সুকেশি বরুয়া, ডোমিনিক দাদা-দিদি, জিওভান্নি দাদা, মারিয়া লুইসা দিদি এবং আশা ভবনের প্রত্যেকের সাহচর্য পেয়েই আমি ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি।”

এখানেই শেষ নয়। এরপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর নার্সিং-এর ট্রেনিং নেন মায়া। পাশাপাশি মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে করেন ডি-এড কোর্সও। আজ আশা ভবন সেন্টারেই নার্সের কাজ করেন তিনি। সেইসঙ্গে মায়ের হাতেও তুলে দিতে পারেন নিজের উপার্জনের টাকা। আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের রোল মডেল হিসাবে আশা সত্যিই এক অসম লড়াইয়ের নাম।

Powered by Froala Editor

More From Author See More