ছেলেবেলার স্বপ্নপূরণ করতে এসে অলিম্পিকে সোনা গণিতের অধ্যাপকের

স্টার্টিং লাইনে অপেক্ষা করে আছেন পৃথিবীর নানা দেশের সেরা সাইকেল রেসাররা। রেফারির নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে প্রতিযোগিতা। কেউ কাউকে এক চুল ছেড়ে দিতে রাজি নন। প্রত্যেকেই এই লড়াই জিততে এসেছেন। জিততে এসেছেন অ্যানা কিসেনোফারও। কিন্তু তিনি জানেন, এই চাওয়াটা এক প্রকার অসম্ভবই। তিনি নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন শুধু। এবং এভাবেই ইতিহাস গড়ে উঠল টোকিওর মাটিতে। সবাইকে অবাক করে মহিলাদের সাইকেল রেসে স্বর্ণপদক তুলে নিলেন অস্ট্রিয়ার কিসেনোফার।

অলিম্পিক মানেই অঘটনের মঞ্চ। বহু সমীকরণ ব্যর্থ হয়ে যায় প্রতিযোগীদের মনোবলের কাছে। কিন্তু যে রেসারের নাম পৃথিবীর কেউ কোনোদিন শোনেননি, তিনি একেবারে সোনা জয় করে নিয়ে যাবেন! এটা ভাবতে পারেননি কেউই। অস্ট্রিয়ার অ্যানা কিসোনেফার। এই মুহূর্তে ক্রীড়া জগতে অন্যতম আলোচিত একটি নাম। অথচ এতদিন তাঁকে সবাই চিনতেন শুধুই গণিতের অধ্যাপক হিসাবে। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর এবং কাতালুনিয়ার পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার পর অধ্যাপনা এবং গবেষণা নিয়েই থাকতেন তিনি। এখন তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লাউসানের অধ্যাপক। তবে ২০১৭ সালে হঠাৎই তাঁর মনে হয়, আরেকবার ছেলেবেলার স্বপ্নের পিছনে ছোটা যাক। সেই থেকে শুরু হল অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি।

বহু আগে সাইকেল রেসিং-এর ট্রেনিং নিয়েছিলেন কিসেনোফার। তারপর সেই অভ্যাসটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এখন তাঁর কোনো কোচ নেই, নেই ফিটনেস মাস্টার বা নিউট্রিশনিস্ট। তিনি একা। নিজেই সমস্তটা হিসাব করেছেন। সারাদিনে কতটা খাবার খাবেন, কতটা অনুশীলন করবেন সবই। তাঁর কথায়, সবটাই তো আসলে গণিত। গণিতের শিক্ষাকেই কাজে লাগিয়েছেন নিজেকে তৈরি করতে। তবুও কি এমন অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা যায়? ট্রাকে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত বিভিন্ন সময়ের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন রেসাররা। রয়েছেন বর্তমানের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অ্যানা ব্রেগেন, গতবারের অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদকজয়ী এলিসা বোরগিনির মতো প্রতিযোগীরা। অথচ অ্যানা ব্রেগেনকে ৭৫ সেকেন্ড পিছনে ফেলে দিয়ে সোনা ছিনিয়ে নিলেন কিসেনোফার।

আসলে প্রতিযোগীদের প্রত্যেকের উপরেই ছিল প্রত্যাশার চাপ। তাঁরা জানতেন, যে কোনো মূল্যে জিততে হবে। জেতার দিকে লক্ষ দিতে গিয়ে নিজের সম্পূর্ণটুকু দিতে পারেননি তাঁরা। এমনটাই মত কিসেনোফারের। তিনি নিজের শরীর নিংড়ে দিতে পেরেছেন, কারণ হেরে গেলেও তাঁকে দোষ দিতেন না কেউই। শেষ লাইন পেরনোর সময় শরীরের প্রতিটা পেশি যেন ছিঁড়ে যেতে চাইছে। ওদিকে অবাক বিস্ময়ে আনন্দটুকু জানাতেও ভুলে গিয়েছেন অস্ট্রিয়ার সমর্থকরা। ১২৫ বছর পর অলিম্পিকের সাইকেল রেসে সোনা জয় অস্ট্রিয়ার। আর তার নেপথ্যে থাকা মানুষটিকে এই প্রথম চিনল ক্রীড়া জগত।

আরও পড়ুন
প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসাবে ৭ পদকজয় এমা ম্যাককিওনের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অলিম্পিকের সুযোগ হাতছাড়া, তেভাগাই হয়ে উঠেছিল ইলা মিত্রের লড়াইয়ের ময়দান