ধরুন, আপনার সামনে ৩৬ জন অফিসার আছেন। তাঁরা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মিলিটারি রেজিমেন্ট থেকে এসেছেন। তাঁদের পদমর্যাদাও আলাদা। এবার আপনাকে এই ৩৬ জনকে একটি স্কোয়ারে বা বর্গক্ষেত্রে সাজাতে বলা হল। এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে পাশাপাশি-উপরনিচ প্রতিটা সারিতে ছয়জন করে থাকেন, এবং কোনও সারিতেই অফিসারদের পদমর্যাদার পুনরাবৃত্ত হবে না।
উপরের ধাঁধাটির প্রবক্তা বিখ্যাত গণিতজ্ঞ লিওনার্ড ইউলার। আপাতদৃষ্টিতে ধাঁধাটি সরল বলে মনে হলেও, তেমনটা নয়। প্রায় ১১৭ বছর ধরে ইউলার-সহ বহু বিজ্ঞানী এই ধাঁধাটির সমাধান করার চেষ্টা করেছেন, এবং অসফল হয়েছেন। এমন সময় মধ্যপ্রদেশে জন্ম নেওয়া এক ৪২ বছরের অঙ্কপাগল লোক সমাধান করে ফেলল এই ধাঁধার। অঙ্কের মজাদার দুনিয়ায় পরিচিত হলেন সারদচন্দ্র শঙ্কর শ্রীখান্ডে।
১৯১৭ সালের ১৯ অক্টোবর, মধ্যপ্রদেশের এক অতি সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন সারদচন্দ্র। বাবা ছিলেন গমকলের সামান্য কর্মচারী। মাইনে পেতেন সামান্য কটা টাকা, কিন্তু সংসারটা যে বিরাট! সারদচন্দ্ররা দশ ভাইবোন ছিলেন। এতজনের খাওয়া, পড়াশোনা— চাপ ছিল ভয়ানক। কিন্তু মেধাবী সারদচন্দ্র তাঁর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন স্কলারশিপের মাধ্যমে। নাগপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অফ সায়েন্স থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে পাশ করার পর তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের চাকরিতে যুক্ত হন।
নর্থ ক্যারোলিনাতে পিএইচডি করার সময় সারদচন্দ্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ইউলারের এই ধাঁধার। তখনও অবধি, এই ধাঁধাটি বিশ্বের অন্যতম জটিল ধাঁধার একটি বলে গণ্য হত। স্বয়ং ইউলার বলেছিলেন, এটি সমাধানযোগ্য নয়। সমস্যার পেছনের আসল অঙ্কটি কী, সেটা খুঁজতেই লেগে পড়লেন সারদচন্দ্র। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেন্টর আর সি বোস এবং ই টি পার্কার। অবশেষে পথ খুঁজে পেলেন তাঁরা। ইউলারকে ভুল প্রমাণ করে ধাঁধার ভেতরের অঙ্কটাকে নিয়ে এলেন তাঁরা। সমাধান হল ১১৭ বছর ধরে সমাধান না হওয়া একটা ভুলভুলাইয়া।
২০০৯ সালে পাকাপাকি ভাবে ভারতে চলে আসেন ‘ইউলার স্পয়লার’। হ্যাঁ, বন্ধু এবং সহ-বিজ্ঞানীরা এই নামেই ডাকত সারদচন্দ্র শ্রীখান্ডেকে। ২০১৭-তে শতবর্ষ পূরণ করে ফেলেছেন এই গণিতবিদ। এই শতাব্দী-অতিক্রান্ত বয়সেও, বিজ্ঞানকে ছেড়ে যাননি তিনি।