কয়েকদিন আগেই গ্লাসগোতে শেষ হয়েছে জলবায়ু সম্পর্কিত শীর্ষস্থানীয় সম্মেলন কপ-২৬। পরিবেশ বাঁচাতে ও দূষণ আটকাতে একাধিক সিদ্ধান্তও নিয়েছিল শক্তিধর দেশগুলি। অথচ, তার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই মানুষেরই কর্মকাণ্ডে ভয়াবহ দূষণের শিকার হল মহাকাশ। মহাজাগতিক বর্জ্য (Space Junk) অপসারণ করতে গিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনল রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’।
সাম্প্রতিক সময়ে মহাকাশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্পেস ডেব্রি বা মহাজাগতিক বর্জ্য। সাধারণত, কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ বা মহাকাশযানের বিচ্ছিন্ন অংশ কর্মক্ষমতা হারালে তা স্থায়ীভাবে থেকে যায় মহাশূন্যেই। কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথ ছাড়াই ভেসে বেড়ায় মহাকাশে। ফলে অন্যান্য কার্যকরী উপগ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই সমস্যার সমাধান করতেই এক দশক আগে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস। মহাজাগতিক বর্জ্যকে পৃথিবীর ঠেলে সরিয়ে দেবে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষসীমার বাইরে।
সম্প্রতি, রাশিয়ার উৎক্ষেপিত একটি উপগ্রহের ওপরে সেই ক্ষেপণাস্ত্রেরই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে রসকসমস। তবে উপকারের বদলে তার পরিণতি হল ভয়ঙ্কর। বলা যায়, হিতে বিপরীত। মিশাইলের আঘাতে শূন্যে ভেসে থাকা উপগ্রহটি টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মহাকাশে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি দৃশ্যমান খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট উপগ্রহটি। তাছাড়াও তৈরি হয়েছে কয়েক লক্ষ ধূলিকণা। যে কণাগুলি মহাকাশচারীর স্পেসস্যুটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পক্ষে যথেষ্ট। অন্যদিকে দৃশ্যমান বড়ো টুকরোগুলি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণরত অন্যান্য উপগ্রহ তো বটেই, এমনকি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকেও রীতিমতো ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
কয়েকদিন আগেই বড়োসড় ফাটল লক্ষ করা গিয়েছিল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। সেই ফাটল সম্পূর্ণভাবে মেরামত করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন গবেষকরা। তার ওপরে এই ধরনের মহাকাশ বর্জ্যের সামান্যতম আঘাতও বড়ো বিপত্তি ডেকে আনতে পারে, এমনটাই অভিমত বিজ্ঞানীদের। তাছাড়াও এই ধরনের বর্জ্যের কারণে বিঘ্ন ঘটতে পারে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয়, টেলিভিশন সম্প্রচার, মোবাইল নেটওয়ার্ক-সহ একাধিক পরিষেবা। কিন্তু তারপরেও এমন একটি পরীক্ষার জন্য অন্যান্য মহাকাশ সংস্থাগুলির সঙ্গে কেন কোনোরকম পূর্ব-আলোচনার পথে হাঁটল না রসকসমস, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার এই কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে। এর আগে ২০০৭ সালে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল চিনও। একের পর এক ভুলের পুনরাবৃত্তির পরেও আদৌ কি কোনো শিক্ষা নেবে মানবসভ্যতা? জানা নেই উত্তর…
Powered by Froala Editor