পশ্চিমবঙ্গে দেখা নেই ইলিশের, পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে, কেন?

বর্ষা প্রায় বিদায় নিতে চলল। অথচ ভাগীরথীর মোহনায় ইলিশের (Hilsa Fish) দেখা নেই। দিন পনেরো ধরে মোহনায় ঘোরাঘুরি করে এক একজন মৎসজীবি হয়তো সাকুল্যে ৪০ কি ৫০টি মাছ পেয়েছেন। সবার মুখেই একটাই কথা, মা গঙ্গা শস্যহীন (ইলিশকে এই নামেই ডাকেন মৎসজীবিরা) হয়ে পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অঞ্চলে বেশ কয়েক বছর ধরেই ইলিশের সংকট ছিল। চলতি মরশুমে তা একেবারে হাহাকারে পরিণত হয়েছে।

“ইলিশের হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ নির্বিচারে ইলিশ শিকার। এটা সবাই জানেন। এই নিয়ে সরকারি নির্দেশও আছে, ছোটো ইলিশ ধরা যাবে না।” বলছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক প্রামাণিক। যথাযথভাবে নিয়ম মানা হলে আজ এই দিন দেখতে হত না বলেই তাঁর বিশ্বাস। তাঁর মতে, “মাছচাষিরা একটু বেশি লাভের আশায় ছোটো ইলিশ ধরেছেন। তাঁদের তখনই বোঝানো উচিৎ ছিল, এভাবে আসলে তাঁরা নিজেদেরই স্থায়ী বিপদ ডেকে আনছেন।”

তবে ছোটো ইলিশ শিকারের বাড়বাড়ন্ত দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই রয়েছে বলে স্বীকার করছেন তিনি। তারপরেও বাংলাদেশ বা মায়ানমারে এখনও যথেষ্ট পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায়। এর পিছনে গঙ্গার নাব্যতা কমে যাওয়াই অন্যতম কারণ, মত অধ্যাপক প্রামাণিকের। ইলিশ মাছের প্রজনন ঋতু হিসাবে সাধারণত বর্ষাকালকে ধরা হলেও আসলে তারা দুবার নদীতে আসে। একবার বর্ষাকালে, আর একবার গ্রীষ্মকালে। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ। কিন্তু তখন নদীর জল উষ্ণ থাকায় মাছদের জলের অনেক গভীরে থাকতে হয়। আর তাই মাছচাষিদের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে ভাগীরথীর নাব্যতা এতটাই কমে গিয়েছে যে ওই সময় পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। বদলে তারা মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ বা মায়ানমারের দিকে। কারণ পদ্মা বা সিতুয়ে নদীর মোহনায় নাব্যতা এখনও ততটা কমে যায়নি। বর্ষাকালেও তাই তারা পুরনো ঠিকানাতেই ফিরছে।

তবে এই দুটি প্রধান কারণ ছাড়াও আরও একাধিক কারণ রয়েছে বলেই মত অধ্যাপক প্রামাণিকের। তাঁর কথায়, “বর্তমানে যে কোনো প্রাণীর হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবেই বলা যায়, পরিবেশ দুষণের কারণে এমনটা ঘটছে। দূষণ আজ আমাদের সবদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। আর গাঙ্গেয় অববাহিকার মতো কলকারখানা এবং দূষণের উৎস তো সত্যিই বিরল। ফলে গঙ্গা মরছে, মরছে ইলিশও।” ইতিমধ্যে গঙ্গা সংস্কারের বিষয়ে কেন্দ্রকে একাধিকবার সতর্ক করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকেও নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে গত ৩০ বছরে। তবু দূষণ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এই বহুমুখী সংকটের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশকে বাঁচানোটা সহজ কাজ নয়।

Powered by Froala Editor