খারাপ সময় কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না লেবাননের। কিছুতেই শাপমুক্ত হতে পারছে না পাশ্চিম এশিয়ার ছোট্ট এই দেশ। গত মাসের ৪ তারিখেই বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ছারখার করে দিয়েছিল রাজধানী বেইরুটকে। প্রাণ গিয়েছিল শতাধিক মানুষের। আহত হয়েছিলেন প্রায় হাজারের বেশি মানুষ। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই এবার আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করল বেইরুটের বন্দর এলাকাকে। আর তার জেরেই চাঞ্চল্য ছড়াল লেবাননের রাজধানীতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরেই হঠাৎ ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় বেইরুট বন্দর থেকে। তারপরই কমলা আগুনের শিখা জানান দেয় অশনিসংকেত। ঘটনাস্থলে ছুটে যান দমকলকর্মী এবং বেইরুট পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় লেবাননের সামরিক বাহিনীকেও। দমকল যাতায়াতের সুবিধার জন্য বন্ধ করা হয় বেইরুট বন্দরের মূল রাস্তা। অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টার পরেও এখনও আয়ত্তে আসেনি পরিস্থিতি। জ্বলছে লেবাননের রাজধানী। তবে এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বেইরুট বন্দরের পরিচালক বাসেম আল-কায়েসি জানিয়েছেন বন্দরের একটি গুদামে মজুত ছিল রান্নার তেল। সেই সঙ্গে অন্য একটি গুদামে রাখা ছিল গাড়ির টায়ার। সেখান থেকে ছড়িয়েছে আগুন। দমকলবাহিনীর সন্দেহ প্রথমে তেলে অগ্নিসংযোগ হয় কোনোভাবে তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে টায়ারের গুদামে। ঘন কালো কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া টায়ারের দহনের জন্যই তৈরি হচ্ছে বলে তাঁদের প্রাথমিক ধারণা।
গত ৪ আগস্টের আতঙ্ক এখনও কাটেনি বেইরুটবাসীদের থেকে। অনেকেই সেই ঘটনার কারণে এখনও ট্রমার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার অগ্নি সংযোগের ঘটনার সাক্ষী হতেই বন্দরের কর্মীরা কাজ ছেড়ে রেখেই বেরিয়ে আসেন ঘটনাস্থল থেকে। নয়া বিপদের গন্ধ পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটি ঘোষণা করে বন্দরের আশেপাশের অঞ্চলের কর্মসংস্থানগুলিও। তবে এই দুর্দিনে আরও একবার সম্প্রীতির ছবি ফুটিয়ে তুলল লেবানন। বিস্ফোরণে ভেঙে যাওয়া জানলা, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই বেইরুটের মানুষ একে অপরকে, প্রিয়জনদের সতর্ক করল বিপদের ব্যাপারে। ফোনে ফোনে পাঠাল সতর্কবার্তা।
আরও পড়ুন
বেইরুটের বিস্ফোরণে উত্তাল লেবানন, প্রতিবাদীদের দাবি মেনে পদত্যাগ সরকারের
তবে এই অগ্নিকাণ্ড নতুন করে উসকে দিচ্ছে রাজনৈতিক বিতর্ককে। ৪ আগস্টের বিফোরণের পিছনে সরকারের অবহেলা ছিল অন্যতম কারণ। যা চর্চিত হয়েছিল সারা বিশ্বজুড়েই। ৪ টনেরও বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেন এভাবে ফেলে রাখা হল বন্দরে, তা নিয়েই শুরু হয়েছিল জল্পনা। সেই প্রমাণ লোপাটের জন্যই কি এবার এই অগ্নিসংযোগ ঘটানো হল ইচ্ছাকৃতভাবে। উঠছে সেই প্রশ্নও। উল্লেখ্য চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবারও একটি ছোট অগ্নিকাণ্ড ঘটে গিয়েছিল বেইরুটে। যা প্রাথমিক আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও দ্রুত আয়ত্তে আসে। তারপরেও কেন সচেতন হল না সরকার, সেই বিষয়টিই এখন অপরিষ্কার সকলের কাছে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তীব্রতায় হিরোশিমার প্রায় ২০ শতাংশ, বেইরুটের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননের খাদ্যভাণ্ডারও