আমাজনের বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যকে (Amazon Rainforest) বলা হয় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। ঘন সবুজে ঢাকা বনানী জোগান দেয় বিশ্বের ২০ শতাংশ অক্সিজেন। অসংখ্য পশুপাখির নিশ্চিন্ত বাসস্থান এই অরণ্যে। কিন্তু বর্তমানে আমাজন অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠছে প্রাণীকূলের জন্য বধ্যভূমি। বিশেষ করে টেফে হ্রদের (Trefe Lake) উষ্ণতা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে উঠছে প্রাণীদের। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ানক খরা। সব মিলিয়ে গত এক মাসে আমাজনে মৃত্যু ঘটেছে একশোর বেশি ডলফিনসহ অসংখ্য জীবের।
অক্টোবর মাসের শুরুতেই খবর পাওয়া গেছিল ডলফিনের (Dolphin) মৃত্যুর। হ্রদের জলে ভেসে উঠছিল একের পর এক দেহ। মাংসাশী প্রাণীরা ছিঁড়ে যাচ্ছে তাদের শরীর। এই মর্মান্তিক দৃশ্যে নড়েচড়ে বসেছিল অনেকেই। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ তদন্তসাপেক্ষ বলে জানানো হলেও, হ্রদের জলের উষ্ণতাই যে এর জন্য দায়ী তা অস্বীকার করেনি কোনো পক্ষই। যা তখন ছাড়িয়েছিল ১০২ ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মিলেছিল একশোটির বেশি মৃতদেহ। কিন্তু একমাস কেটে গেলেও সুরাহা হয়নি এই সমস্যার। ইতিমধ্যে প্রস্তাব ওঠে জীবিত ডলফিনদের নদী ও স্থানীয় জলাশয়গুলিতে নিয়ে আসার জন্য। অনুমান যে, তুলনামূলক ঠান্ডা জলস্তরে বাঁচতে পারবে তারা।
কিন্তু গত এক সপ্তাহের মধ্যে মারা গেছে মোট ১৭৮টি ডলফিন। যা টেফে হ্রদের মোট ডলফিন সংখ্যার প্রায় দশ শতাংশ। যার মধ্যে রয়েছে গোলাপি রংয়ের দুষ্প্রাপ্য ডলফিন (Pink Dolphin)। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রজাতির আরো জলজ প্রাণীর দেহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মৃত্যুতে অনুমান করা যায় যে আমাজনের অন্যান্য প্রান্তেও মৃত্যু ঘটছে প্রাণীদের। গহীন অরণ্যের মধ্যে যা এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এমনিতে আমাজন নদীর জলস্তর যে পরিমাণ নেমে গেছে, তা গত এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি। সমগ্র অববাহিকার বাস্তুতন্ত্র প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর ফলে। অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না পরিস্থিতি বাঁক নেবে আরো বিপজ্জনক দিকে। ডলফিনসহ অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু ইঙ্গিত করেছে সেদিকেই।
শুধু টেফে হ্রদ কিংবা আমাজন নদীতে নয়, গোটা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বর্তমানে চলছে খরার দাপট। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রভাব যেমন রয়েছে, তার উপর ‘এল নিনো’-র উষ্ণ সমুদ্রস্রোত থাবা বসিয়েছে এই অঞ্চলে। জোড়া ধাক্কায় আপাতত বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবনও। এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিত্য ভুগতে হচ্ছে জলসমস্যায়। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-পুকুরের জলস্তর। নদীপথের মাধ্যমে যোগসূত্র বজায় রাখা বহু এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সম্পূর্ণভাবে। এই অবস্থায় আদৌ ডলফিনদের নিরাপদ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। তাছাড়া শুধুমাত্র উষ্ণতার দিকে তাকিয়ে এক পরিবেশের প্রাণীকে অন্য পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ায় যুক্তিযুক্ত নয় বলেই অনেকের মত। এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল ব্রাজিলের মামিরাউয়া ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরাও।
আরও পড়ুন
ডলফিনের প্রাণ বাঁচাতে মানবপ্রাচীর জীববিজ্ঞানীদের, আশ্চর্য দৃশ্য ফ্লোরিডায়
ফলে উত্তর খোঁজা চলছে এখনও। প্রায় মাসখানেক আগে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রাজিল সরকার। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মৃত্যুমিছিল। সমাধান কী? উত্তরের অপেক্ষায় সকলেই...
আরও পড়ুন
সরকারের মদতেই নির্বিচারে তিমি ও ডলফিন শিকার, ভয়াবহ ছবি ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জে
Powered by Froala Editor