শহরে শীত পড়েছে বেশ জাঁকিয়েই। ডিসেম্বর ফুরোতেও দেরি নেই আর। শীতকাল আর ডিসেম্বর মানেই কলকাতার বুকে ক্রিসমাসের আবহ। বরাদ্দ ছুটি আর পিকনিকের মেজাজ। বড়দিনের সন্ধেয় দল বেঁধে পার্ক স্ট্রিট কিংবা বো ব্যারাকে ঢুঁ। কিন্তু এই উদযাপনের বাইরেও আরেকটা কলকাতা আছে, যা তৈরি হয় শীতকে কেন্দ্র করেই। পাহাড়ের দেশের মানুষরা নেমে আসেন এখানে। বিক্রি করেন শীতের পোশাক। তিলোত্তমার এই রেওয়াজের কথা জানেন?
ধর্মতলা থেকে লেলিন সরণি ধর খানিক এগোলেই ওয়েলিংটন মোড়। তার গা ঘেঁষেই প্রতিবছর বসে এই পসরা। হিমাচল প্রদেশ, নেপাল, দার্জিলিং, ভুটানের গ্রাম থেকে নেমে আসেন পাহাড়িয়ারা। সঙ্গে থাকে অজস্র পোশাক। ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান গড়ে টানা তিনমাস ব্যবসা করেন তাঁরা। কিছু মানুষ হেদুয়াতেও বসেন বাহারি পোশাক নিয়ে, তবে তুলনায় কম। বছরশেষের এই দিনগুলোয়, কলকাতাই তাঁদের রুটিরুজির একমাত্র ঠিকানা। কলকাতা কর্পোরেশনকে সামান্য কিছু কর দিয়ে, লাভও মন্দ হয় না হিমাচলের ইরশাদ বা ভুটানের লক্ষ্মী ছেত্রীদের।
১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি - তিন মাস তাদের ঠাঁই নিতে হয় সদর স্ট্রিট বা শিয়ালদহের গেস্ট হাউস বা হোটেলে। সকাল থেকে রাত অব্দি নিরলসভাবে ক্রেতাদের চাহিদামতো শীতের জিনিস জোগান দিয়ে যান তাঁরা। রয়েছে জ্যাকেট, সোয়েটার, স্কার্ফ, উলের চাদর, হ্যান্ডমেড সোয়েটার ইত্যাদি হরেক জিনিসের সম্ভার। দাম ও সাধ্যের মধ্যেই। সোয়েটার, জ্যাকেট মোটামুটি ২০০-৩০০০ টাকার মধ্যেই। আবার, পশমিনা চাদর বা কাশ্মীরি শালও চাইলে পাবেন ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
ইরশাদ জানান, প্রায় বারো বছর ধরে তিনি আসছেন কলকাতায়, কিন্তু প্রতিবারই প্রথমবারের মতো আনন্দ হয়। এখানকার মানুষদেরও তাঁর ভারী পছন্দ। তিনমাস ভালোই কাটে। ছুটি পেলেই যেমন কলকাতার লোকেদের মনটা পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছটফট করে, তেমনি ওঁদেরও পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ছেড়ে শহরের কোলাহল বছর-বছর নতুনত্ব জোগায়। আবার নেপালের লক্ষ্মী ছেত্রীর কথায় ধরা পড়ল হতাশার ছবি। আধুনিক ব্র্যান্ডেড শীত পোশাকের রমরমায়, মাঝের কিছু বছর ব্যবসায় মন্দা কপালে ভাঁজ ফেলেছিল তাঁর। কিন্তু গত বছরে ছবিটা বেশ ভালোই বদলেছে। ফিক্সড প্রাইস-এর লেবেল আঁটা থাকলেও ক্রেতারা শীত পোশাক পছন্দ করছেন, কিনছেন।
শ্যামবাজার-কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলাগামী বাসগুলি থেকে যাত্রীরা মুখ বাড়িয়ে দেখে নেন প্রায় ১০০টি অস্থায়ী দোকানে থরে থরে সাজানো নানা কার্ডিগান, পুলোভার, জ্যাকেট। এমনকি আজকাল বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও কিছু বিক্রেতা কম্বল, উলের টুপি ইত্যাদি নিয়ে বসেন।
ট্রামলাইনের ধার ঘেঁষে, সুবোধ মল্লিকের প্রাচীন রাজবাড়ির কাছেই আধুনিক হিন্দ আইনক্স, ব্যস্ত ধর্মতলা-সেন্ট্রাল অ্যাভভিনিউকে পাশে রেখে এ যেন কয়েকদিনের একটুকরো শীতের হাট। পুরোনো কলকাতার এক রোদ পোহানো রংমিছিল...