মার্কি লুকাস রেনভেল্ড। বয়স মাত্র ২৯ বছর। প্রতিভাকে যে বয়স দিয়ে মাপা সম্ভব নয় কখনোই, তাই পারতপক্ষে বুঝিয়ে দিলেন এই ডাচ লেখিকা। মাতৃভাষায় রচিত তাঁর প্রথম উপন্যাসই আলোড়ন ফেলে দিল পৃথিবীর সাহিত্যমহলে। ২০২০-র বুকার পুরস্কার নামাঙ্কিত হল তাঁর নামেই। কনিষ্ঠতম বুকার বিজেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল তাঁর নাম। প্রথম বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত ডাচ ঔপন্যাসিকও তিনিই।
‘দ্য ডিসকমফর্ট অফ ইভিনিং’। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। তারপর তা অনূদিত হয় ইংরাজিতে। অনুবাদ করেন মাইকেল হ্যাচিসন। পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার তিনিও। ২০২০ সালে বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল সবমিলিয়ে ৩০টি ভাষার ১২৪টি বই। সেখান থেকেই বিচারকরা বেছে নেন এই ডাচ উপন্যাসটিকে। রীতিমত এই বই চমকে দিয়েছে তাঁদের।
বইটির প্রেক্ষাপট খানিকটা অতিবাস্তব হলেও, তা ধীরে ধীরে সমসাময়িক সময়কে মিশিয়ে দেয় গল্পের ছলে। গল্প ঘিরেই চলতে থাকে বিষাদের সঙ্গে যুদ্ধ, মানসিক টানাপোড়েন। উপন্যাসের মূল চরিত্র বছর দশেকের এক কিশোরী। যশ। ভাইকে আইস স্কেটিং-এ নিয়ে যেতে অনুরোধ করে সে। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাগ চেপে যায় তার। ক্রোধ জন্ম দেয় শাপ-শাপান্তের, মৃত্যুকামনার।
সেদিন সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার ভাইয়ের। দুই ঘটনার এক অদৃশ্য সমাপতনই তৈরি করে দেয় একটি উপন্যাসের যাবতীয় জ্বালানি। ভাইয়ের মৃত্যু যেমন আঘাত আনে তার মননে। তেমনই মৃত্যুশোকের অভিঘাত পঙ্গু করে দেয় তার বাবা-মাকেও। বাস্তবের মাটিতে এরপর থেকেই আছড়ে পড়ে গল্পের মোড়। মানসিক ঘাত-প্রতিঘাত চলতে থাকে বাকি উপন্যাসজুড়ে।
আরও পড়ুন
অবশেষে কাজের স্বীকৃতি, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন নদীয়া তাঁতশিল্পী সরস্বতী সরকার
লুকাস রেনভেল্ডের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মিল পাওয়া যায় এই উপন্যাসের। ছোটোবেলায় নিজের ভাইকে হারিয়েছিলেন রেনভেল্ড। সেই খেদ কোথাও যেন অল্প অল্প করে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা উপন্যাসের পাতায়। ছড়িয়ে দিয়েছেন বাবা-মায়ের যন্ত্রণাও। রেনভেল্ড জানান, ২০১৮ সালে এই উপন্যাস প্রকাশিত হলেও এখনও তাঁর বাবা-মা পড়ে দেখেননি এই উপন্যাস। তবে খুব শীঘ্রই তাঁরা এই বই পড়বেন বলে আশাবাদী তিনি। “বাবা-মা পড়লে হয়তো বুঝবেন সবটাই হয়তো তাঁদেরকে বলা নয়, এটা একটা উপন্যাসও।” নিজের অতীত, আত্মজীবনীকে হয়তো এভাবেই মিশিয়ে দিয়েছেন রেনভেল্ড। নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ক্ষতচিহ্ন গল্পের ছলেই উপস্থাপন করেছেন, ভাগকরে নিয়েছেন সকলের সঙ্গে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বাস কন্ডাক্টর থেকে পুরস্কারজয়ী পরিচালক, মণিপুরের বিচিত্র জীবনের সাক্ষী অমর