‘একটা সময় আদর্শ আলাদা হলেও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল মানুষ। সহাবস্থান করত ভিন্ন মতাদর্শ। বর্তমান পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ভারতীয় সমাজের ক্ষেত্রে। আমি জরুরি অবস্থার সাক্ষী থেকেছি। তাই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না বর্তমানে আমরা এক অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছি।’
সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মারাঠি লেখক অনন্ত যশবন্ত খারে। অবশ্য নন্দ খারে হিসাবেই বেশি পরিচিত তিনি। কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছিল সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের তালিকা। সেখানে ছিল কথাসাহিত্যিক নন্দ খারের নামও। তবে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
২০১৪ সালে তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস ‘উদ্যা’-র জন্য চলতি বছরে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন খারে। আকর্ষণীয় বিষয় হল, উপন্যাসটির মূল প্রেক্ষাপট হল এমন একটি সময়, যেখানে মানুষ প্রযুক্তির ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। এই উপন্যাসের ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে আপাদমস্তক ডেস্টোপিয়ান রেখাচিত্র। আসলে অন্যান্য ডেস্টোপিয়ার মতোই আগামী অন্ধকার সময়কেই তুলে ধরেছেন তিনি। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন নন্দ খারের কথায়, ‘সাহিত্য রচনাও একটি রাজনৈতিক কাজ। নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দেওয়া।’
ভারতের গণতন্ত্র ও বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সম্পর্কেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। সরকারের একাধিক সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণার প্রেক্ষিতে তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় সংবিধানে লিখিত কথাগুলো অপরিবর্তিত থাকলেও আজকে তা নিষ্প্রাণ। কথায় উঠে আসে ভীমা কোরেগাঁও মামলার কথাও। যে মামলায় সাহিত্যিক ভারভারা রাও, অধ্যাপক সোমা সেন-সহ গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিক বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব। তার সমালোচনা করেই খারে জানিয়েছেন, ইউএপিএ আইনের বদল আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এই প্রথম নয়। বছর য়েক আগে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি জানান, মানুষের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাই তাঁর কাছে যথেষ্ট। বিনয়ের সঙ্গেই জানিয়েছেন, কোনো রকমের পুরস্কার নিতেই আগ্রহী নন তিনি…
Powered by Froala Editor