মারাঠি সাহিত্যের জগতে ঘটে গেল এক নক্ষত্রপতন। ছয় দশক ধরে নাটক ও সাহিত্য নিয়ে নিরলস পরিশ্রমের পর চিরদিনের মতো বিশ্রাম নিলেন রত্নাকর মাটকারি। রবিবার শেষরাতে মফঃস্বল শহর মারোলের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। গত সপ্তাহেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক পরীক্ষার পরেই দেখা যায়, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে করোনা ভাইরাস। এক সপ্তাহের পরিশ্রমের পর হার মানতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
নাটক বা সাহিত্যকে যাঁরা অরাজনৈতিক বলতে চান, মাটকারি তাঁদের দলে ছিলেন না। তাঁর নাটক ছিল সমাজের লড়াইয়ের মঞ্চ। আর সেই লড়াই নাটকের মঞ্চ ছাড়িয়ে নেমে এসেছে রাজপথেও। নর্মদা আন্দোলনের সময় তাঁকে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে। তখনই তাঁর আঁকা ছবির সঙ্গেও পরিচিত হয়েছেন মানুষ। চিরকাল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল থেকেছেন তিনি। তবে তাঁর নাটক বা সাহিত্য কখনোই রাজনৈতিক পাঠ্যপুস্তকের ভাষায় লেখা ছিল না। বরং তার মধ্যে উঠে আসত সাধারণ মানুষের ছবি। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের নানা টানাপোড়েন। যা সত্য, যা স্বাভাবিক; তাকেই মঞ্চে হাজির করতেন তিনি। অনেক সময় এমনও হয়েছে, নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে তার একটি সংলাপও লেখা হয়নি। চরিত্রদের স্বাভাবিক নিয়মেই গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ নাটকের কাহিনী।
১৯৩৮ সালে জন্ম রত্নাকর মাটকারির। ১৯৫৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে। তারপর যোগ দেন ব্যাঙ্কের চাকরিতে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন আর সাহিত্যই যে তাঁর চিরকালের আকর্ষণ। তাই সে চাকরিতে বেশিদিন টিকতে পারলেন না। ১৯৭৫ সাল থেকেই সম্পূর্ণভাবে নাটকের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন তিনি। ১৯৫৯ সালেই মঞ্চস্থ হয়েছিল তাঁর প্রথম নাটক 'মধুমঞ্জরী'। এরপর ১৯৬২ সালে স্ত্রী প্রতিভা মাটকারির সহযোগিতায় তৈরি করেন একটি ছোটোদের নাট্যদল। প্রাপ্তয়স্কদের জন্য নাটক লেখার পাশাপাশি, শেষ দিন পর্যন্ত ছোটোদের কথা ভেবে গিয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা ২৫০টি গল্পের অধিকাংশই ছোটোদের জন্য লেখা। মূলত ছোটোদের নাটকের জন্যই তিনি সকলের কাছে পরিচিত। সেইসঙ্গে মারাঠি ভাষায় ছোটদের জন্য সিনেমা পরিচালনা এবং প্রযোজনার কাজও করেছেন।
প্রতিদিন বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে করোনা ভাইরাস। তাঁদের মধ্যে আছেন বহু কিংবদন্তি মানুষও। সেই তালিকাতেই যুক্ত হল আরও একটি নাম। রত্নাকর মাটকারির মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকস্তব্ধ মারাঠি সংস্কৃতি জগৎ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন। তবে এখানেই কি সবকিছু শেষ হয়ে যায়? রত্নাকর বেঁচে থাকবেন তাঁর নাটকে, সাহিত্যে। আর তাঁর স্বপ্নের নতুন পৃথিবী বাস্তব হতে যতদিন লাগবে, ততদিন চলবে তাঁর পথচলা।