পূজাবার্ষিকী কিংবা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা—নির্দিষ্ট দিনেই হাতে পেয়ে যান পাঠকরা। কিন্তু আমরা ক’জনই বা খোঁজ রাখি তার পিছনের গল্পগুলোর কথা? কোনো পত্রিকা বা গ্রন্থ প্রকাশের আগে যেমন চাপ থাকে প্রকাশনা সংস্থা এবং প্রযুক্তিবিদদের, তেমনই লেখকদেরও বেঁধে দেওয়া থাকে কঠিন সময়সীমা। ডেডলাইনের তাড়না শুধু মানসিক চাপই নয়, প্রভাবিত করে লেখকের সৃজনশীলতাকেও। প্রয়োজন হয়ে পড়ে শান্ত, নিরিবিলি জায়গার। কিন্তু একুশ শতকে দাঁড়িয়ে মেট্রোশহরের বুকে এমন ‘শান্তিনিকেতন’ আর কই? এবার লেখকদের জন্যই তাই বিশেষ ক্যাফে গড়ে উঠল টোকিও (Tokyo) শহরে।
‘ম্যানুস্ক্রিপ্ট রাইটিং ক্যাফে’ (Manuscript Writing Cafe)। হ্যাঁ, এমনই অদ্ভুত নাম এই ক্যাফের। পশ্চিম টোকিও-র এই ক্যাফেতে সারাক্ষণই বিরাজ করে পিন পড়া নীরবতা। ঠিক লাইব্রেরির মতোই। আর সেখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে একমাত্র লেখকদের। আরও ভালো করে বলতে গেলে, সেইসব লেখকদের যাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। তাঁদের মনঃসংযোগের সুযোগ করে দিতেই এই বিশেষ উদ্যোগ তোকিও-র আঞ্চলিক মঙ্গাশিল্পী টাকুয়া কাওয়াই-এর।
আপাতত ছোট্ট ক্যাফেটিতে রয়েছে মাত্র দশটি আসন। সীমাহীন চা-কফির বন্দোবস্ত রয়েছে সেখানে। অবশ্য গ্লাসে ঢেলে নিতে হবে নিজেকেই। অর্ডার দিলে পাওয়া যাবে সমস্ত রকমের খাবার। সেইসঙ্গে উচ্চগতির ওয়াইফাই, কম্পিউটার, চার্জিং পোর্ট, প্রিন্টার— সবই হাতের সামনেই পাবেন গ্রাহক থুড়ি লেখকরা। চাইলে নিজেও বাড়ি থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারেন ব্যবহারকারীরা। গবেষণামূলক লেখালিখির ক্ষেত্রে তথ্যসূত্রের জন্য সংবাদপত্র কিংবা পত্রিকার প্রয়োজন হলে, তাও সরবরাহ করবে ক্যাফে কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি টুইটারে ক্যাফের ছবি-সহ প্রবেশাধিকারের সমস্ত শর্ত ও নিয়মাবলী প্রকাশ করেন কাওয়াই। তবে ব্যাপারটা খুব একটা সহজ-সরল নয় মোটেই। কড়াকড়ি রয়েছে সর্বত্রই। ক্যাফেতে প্রবেশের আগেই লেখককে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট দিনে কত ঘণ্টার মধ্যে কত শব্দ লেখার কথা ঠিক করেছেন তিনি। সেই মতো মাঝে মাঝেই এসে কাজের অগ্রগতির খোঁজ নিয়ে যাবেন ক্যাফের ম্যানেজার। এমনকি সেই লক্ষ্যমাত্রা শেষ না করতে পারলে ছুটি মিলবে না ক্যাফে থেকে। আর হ্যাঁ, অতি-অবশ্যই কোনোরকম শব্দ করা বা ফোনে গল্প করা চলবে না ক্যাফেতে বসে।
তবে শুধু সৃজনশীল লেখাই নয়, অনুবাদ কিংবা ইমেজ প্রসেসিং-এর মতো কাজও করা যাবে এই ক্যাফেতে বসেই। ন্যূনতম ১৩০ ইয়েন অর্থাৎ আনুমানিক ১ ডলারের বিনিময়ে আধ ঘণ্টা থাকা যাবে এই ক্যাফেতে। তারপর ঘণ্টা পিছু ২.৩৪ ডলার হারে বাড়তে থাকবে ক্যাফের বিল।
কতটা যুক্তিযুক্ত এই ধরনের পরিষেবা, তা নিয়েই ইতিমধ্যেই দ্বিবিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া। সৃজনশীল মানুষদের একাংশ যেমন সাধুবাদ জানিয়েছেন এই উদ্যোগকে, তেমনই আরেক দলের মতামত এই ক্যাফে আরও মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে গ্রাহকদের। তবে এই উদ্যোগের অভিনবত্ব অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো…
Powered by Froala Editor