প্রথম দেখায় আর পাঁচটা সিনিয়র সিটিজেনের থেকে বেশি কিছু মনে হবে না তাঁকে। তাঁর সুস্বাস্থ্য কিছুটা মুগ্ধ করবে নিশ্চই। তবে এর থেকে বেশি কিছু তিনি নিজেও সেভাবে ভাবেননি। কিন্তু হঠাৎ জীবনে একেকটা মুহূর্ত আসে, সমস্ত কিছু বদলে দিয়ে যায়। মন কউরের জীবনে সেই সময়টা আসে ৯৩ বছর বয়সে। তারপর সেই ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। আর, ১০৪ বছর বয়সে পৌঁছে, গতকাল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পেলেন 'নারীশক্তি সম্মান'।
মন কউরের সঙ্গে এ-বছর নারীদিবসে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সম্মান পেলেন দেশের আরও ১৪ জন মহিলা। প্রত্যেকেই নিজের নিজের ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আর মন কউরের দৃষ্টান্ত তো রীতিমতো রূপকথার জন্ম দেয়। এইমুহুর্তে অ্যাথলিটের জগতে তাঁর নাম সবাই চেনে। 'ফিট ইন্ডিয়া' আন্দোলনের পরিচিত মুখ তিনি। অথচ নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন না নিজেই। কেমন ছিল তাঁর সেই জার্নি?
আরও পড়ুন
বয়স ১০৩, অ্যাথলেটিক্সে সোনা জিতলেন পাঞ্জাবের এই মহিলা
কেরিয়ারের শুরু ৯৩ বছর বয়সে। তাও ছেলে গুরুদেবের ইচ্ছে পূরণের জন্য। গুরুদেবের বয়স তখন ৭৮। তিনি নিজেও একজন অ্যাথলিট। অংশগ্রহণ করেছেন ওয়ার্ল্ড মাস্টার গেমেও। যে প্রতিযোগিতা সিনিয়র সিটিজেনদের অলিম্পিক নামে পরিচিত। ছেলের হাত ধরেই খেলার মাঠে পা রাখলেন মন। আর তারপরেই একের পর এক প্রতিযোগিতায় অপ্রতিরোধ্য তিনি।
২০১১ সালেই পেলেন লং জাম্পে রৌপ পদক এবং ১০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মাস্টার গেমে তৈরি করলেন বিশ্ব রেকর্ড। এখন বয়স ১০৪। এবছর জাপান ওয়ার্ল্ড মাস্টার গেমেও পেয়েছেন স্বর্ণপদক। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের ১০০ বছরের উপর বয়স যাঁদের, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী মানুষ মন কউর। দেশবিদেশের নানা প্রতিযোগিতায় ২০টির বেশি পদক পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন
বয়স মাত্র ১০৫, নতুন করে পড়াশুনা শুরু করেছেন কেরালার এই ‘তরুণী’
বয়স বাড়লেই শরীর ভেঙে পড়বে এই ধারণার সঙ্গে অভ্যস্ত আমরা সবাই। আর তাই আমাদের কাছে এক বিরল দৃষ্টান্ত মন কউর। তিনি নিজে কিন্তু মনে করেন, নিয়মিত চর্চা ও সুস্থ খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে থাকলে প্রত্যেকেই 'ফিট' থাকতে পারেন। রাজভবনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে উঠেও মঞ্চ থেকে এই বার্তাই দিলেন তিনি। বয়স তো একটা সংখ্যা মাত্র। সুস্থ জীবনের জন্য দরকার শুধু ইচ্ছাশক্তি।