১০ বছরে ১৫ কোটির বেশি চারা লাগিয়ে বিলুপ্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্য ফিরিয়ে দিলেন হায়দার

এক-একটি ম্যানগ্রোভের চারাকে জলের নিচে কাদার ভিতর পুঁতে দিচ্ছেন বুড়ো মানুষটি। একটি চারার ঠিক দু’পা দূরে আরেকটি চারা, তারপর আরও একটি। এইভাবে জলের নিচে কাদায় চারার পর চারা বুনেই চলেছেন হায়দার এল আলি। গত ১০ বছরে এভাবেই দক্ষিণ সেনেগালের কাসামাঞ্চে দ্বীপে তিনি গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আয়তন শুনলে চমকে উঠবেন। বলা যায়, অ্যাভিচেনা গাছের অরণ্যগুলির মধ্যে এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম।

শুনলে মনে হতেই পারে, অবিশ্বাস্য। অবিশ্বাস্য তো বটেই। স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে ১৫ কোটি ২০ লক্ষ ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতেছেন যে হায়দার এল আলি। একসময় নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ম্যানগ্রোভ-শূন্য হয়ে গেছিল এই অঞ্চল। ফলাফলে, ধানের জমিতেও বাড়তে থাকে নুন। নষ্ট হয়ে যায় ফসল। তখনই হায়দার ঠিক করেন, প্রকৃতিকে তার অরণ্যের পোশাক ফিরিয়ে দেবেন। শুরু হয় অসম্ভবকে সম্ভব করার কাজ। তারপর ১০ বছর ধরে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে তিনি বুনেছেন ১৫ কোটির বেশি ম্যানগ্রোভ চারা। ক্রমে বন্ধ্যা অঞ্চল ফের পরিণত হয়েছে বনে।

অ্যাভিচেনা গাছের পাতা জল থেকে শুষে নেয় নুন। ফলে, বনের পাশেই এখন দিব্বি চলছে ধানচাষ। ম্যানগ্রোভের শিকড়ে বাসা বাঁধছে শামুক। সেই শামুক মাছেদের প্রিয় খাদ্য। ফলে, ম্যানগ্রোভ-সংলগ্ন নদীতে মাছেদের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন স্থানীয় মানুষরা। সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্র ও মানুষের জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখছে এই ম্যানগ্রোভ।

হায়দার একসময় সেনেগালের মৎস্যমন্ত্রী হয়েছেন, বাস্তুতন্ত্রের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু, তাঁর প্রধান নেশা এই ম্যানগ্রোভকে বাঁচিয়ে রাখা আর ক্রমাগত বাড়িয়ে তোলা। “কাটার পর এক-একটি ম্যানগ্রোভের বেড়ে উঠতে যতটা সময় লাগে, আমরা আসলে ততখানি সময় হারিয়ে ফেলেছি। এখন প্রতিটা মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রহের অনেক অনেক গাছ দরকার, বন দরকার।”—বলছেন হায়দার। তাঁকে কী বলা যায় বলুন তো? বনের প্রহরী না বন-মানুষ?

Latest News See More