ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই সবুজ পাতার মাঝে মাঝে মুকুল ধরতে শুরু করে। আর মার্চ মাসে এসে সবুজ ফল দেখা দেয়। আমগাছকে (Mango) এভাবেই মনে চিনি আমরা। ভারতের জাতীয় ফল আম, আর সারা দেশেই আম এক অন্যতম অর্থকরী ফসল। অথচ গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে এক অদ্ভুত সমস্যা। ফলনের কমবেশি তো হতেই পারে, কিন্তু হঠাৎ দেখা যাচ্ছে সারাবছরই আমগাছে মুকুল ধরে থাকছে। লক্ষণ খারাপ না ভালো, তাই বুঝে উঠতে পারছেন না কৃষকরা। অনেকে ভাবছেন, মুকুল বেশি হচ্ছে যখন তখন ফলও বেশি হবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হচ্ছে না। আর এইবার এই রহস্যভেদ করতে নেমেছেন কলোম্বিয়া বিশ্ববদ্যালয়ের একদল গবেষক। আর তাঁদের সমস্ত তথ্য সংগ্রহের কাজে সাহায্য করছেন কেরালার স্কুলপড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
সারা দেশেই সমস্যাটা মোটামুটি একইরকম। তবে কেরালায় সবচেয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই পরিবর্তন। বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য সিজনওয়াচ নামে একটি দল গড়ে তুলেছেন কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কৃষ্ণ অনুজন। সিজনওয়াচের সদস্যরা শহরের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তথ্য লিপিবদ্ধ করে চলেছেন। সেখানে গাছে মুকুল আছে কিনা সেই তথ্য তো রয়েছেই, সঙ্গে থাকছে দৈনিক উষ্ণতা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের হিসাবও। আর সেইসব পরিসংখ্যান মিলিয়েই চলছে তদন্ত। তবে এখনও স্পষ্ট কোনো উত্তরে পৌঁছানো যায়নি বলেই জানাচ্ছেন কৃষ্ণ।
সম্প্রতি একটি নিবন্ধে কৃষ্ণ লিখেছেন, বর্তমানে যে কোনো প্রজাতির সমস্যাকেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঘটছে বলে দাগিয়ে দেওয়া যায়। সেটা খুব একটা ভুল কথাও নয়। তবে এতটা স্থূলভাবে কোনোকিছুর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন বোধহয় উচ্চফলনশীল হাইব্রিড প্রজাতির গাছ লাগানোর জন্যই এমনটা হচ্ছে। তবে সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সমস্ত স্থানীয় প্রজাতির আমগাছেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তবে উষ্ণতা এবং বছরের সার্বিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে একটা ক্ষীণ সম্বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। সেই সম্পর্কের পিছনে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু গবেষণা যে ঠিক পথে এগোচ্ছে, সেই বিষয়ে বিশ্বাসী তিনি। গত কয়েক বছরে ভারতে মৌসুমী বায়ুর গতি বেশ এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। আর তারই প্রভাবে বদলাচ্ছে আমগাছের চরিত্র। তবে এই সম্পর্ক কতটা গভীর এবং কতটা স্থায়ী হতে পারে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
Powered by Froala Editor