ভেঙেছিল সুষুম্নাকাণ্ড, প্রযুক্তির দৌলতে চলচ্ছক্তি ফিরে পেলেন ব্রিটিশ ব্যক্তি

বহুদিন আগেই পক্ষাঘাত-মুক্তির পথ দেখিয়েছিল বিজ্ঞান। হাত-পা, হাঁটু কিংবা অন্যান্য অঙ্গে ভয়ঙ্কর জখম সারিয়ে তোলারও সমাধান রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে। কিন্তু সুষুম্নাকাণ্ড? এতদিন পর্যন্ত সুষুম্নাকাণ্ড বা স্পাইনাল কর্ডের (Spinal Cord) পক্ষাঘাতকে সারিয়ে তোলার কোনো হাতিয়ারই ছিল না চিকিৎসকদের হাতে। স্পাইনাল কর্ডের প্রতিস্থাপনও অসম্ভব বলেই মনে করতে বিজ্ঞানীরা। এবার এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডের নর্দার্ন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

না, অঙ্গ প্রতিস্থাপন নয়। বরং, প্রযুক্তির দৌলতেই হাঁটলেন সুষুম্নাকাণ্ডে পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তি। মিশেল রোকাটি। বছর কয়েক আগে মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তিনি। বিচ্ছিন্ন হয়ে যার প্রাণ বাঁচলেও মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড। চিরদিনের মতো চলচ্ছক্তি হারান মিশেল। থেরাপি কিংবা ওষুধ— কোনোটাতেই সাড়া দিত না শরীর। এমনকি হাল ছেড়েছিলেন চিকিৎসকরাও।

বছর খানেক আগে শেফিল্ডের গবেষকদের হাত ধরে জন্ম নেয় কৃত্রিম স্পাইনাল কর্ড। মূলত, স্পাইনাল কর্ড স্নায়ুতরঙ্গকে সঞ্চালিত করে। এই বিশেষ যন্ত্রটির কাজও তাই। যন্ত্র থেকে নির্গত বৈদ্যুতিক সংকেতই সংযোগ স্থাপন করে মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে। প্রাণীদেহের ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল সফল হলেও, তা মানবদেহের আদৌ প্রযোজ্য কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল গবেষকমহলে। পাশাপাশি সেই অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিও বেশ জটিল।

আশঙ্কা জেনেও এই পরীক্ষায় সম্মতি দিয়েছিলেন মিশেল। আর তারপরেই তাঁর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় বিশেষ যন্ত্রটি। দীর্ঘ সার্জারির পর পৃথক পৃথক স্নায়ুকে ফাইবারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় যন্ত্রটির সঙ্গে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নিউরোরিহ্যাবিলিটেশন’। বলার অপেক্ষা থাকে না, সফল হয়েছে এই মেডিক্যাল সার্জারি। পক্ষাঘাতমুক্তি তো বটেই, লাঠির সাহায্যে দিব্যি হাঁটাচলাও করতে পারছেন মিশেল। সম্প্রতি, নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটির কথা। 

আরও পড়ুন
এবার দেখতে পাবেন দৃষ্টিহীনরাও! পথ দেখাচ্ছে প্রযুক্তি

শুধু স্নায়ু নয়, যন্ত্রটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌলতে ক্রমশ পেশিকলাও সেরে উঠবে বলেই অভিমত গবেষকদের। এমনকি পক্ষাঘাত থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য প্রদান করতে সক্ষম এই যন্ত্র। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল এই অভিনব আবিষ্কার, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে এখনও পর্যন্ত এই যন্ত্রের মূল প্রতিবন্ধকতা, তার খরচ। কর্মদক্ষতা অপরিবর্তিত রেখে কীভাবে সাশ্রয়ী করে তোলা যায় এই যন্ত্রকে, সেই বিষয়েই বিস্তারিত গবেষণা চলবে আগামীদিনে। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা… 

আরও পড়ুন
বাণিজ্যিক চুম্বকে বদলেছিলেন দুনিয়া, প্রযুক্তির ‘নোবেল’-এর স্বীকৃতি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রযুক্তির হাত ধরেই প্রাণ ফিরছে তামা-পিতল শিল্পে