মাঝে মাঝেই যেন আক্রমণ করে তারা। একজন-দুজন নয়। একসঙ্গে প্রায় ২০০ জন। তবে তারা কেউই মানুষ নয়। মানুষের মতোই দেখতে। কিন্তু আকারে যেন পিঁপড়ের চেয়ে একটু বড়ো। ঠিক ধরেছেন, লিলিপুট। জোনাথন স্যুইফটের সেই বিখ্যাত উপন্যাস ‘গালিভার্স ট্রাভেল’-এর দৌলতে এই নামটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। কিন্তু সত্যিই এমন কোনো প্রাণী আছে নাকি? কেউ কি দেখেছেন? পুনে শহরের ৬৩ বছরের এক প্রৌঢ় কিন্তু দেখেছেন। এই লিলিপুটের দল তাঁকে প্রতিদিন আক্রমণ করে চলেছে।
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি। তবে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আর যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিন্তু কেউই এই লিলিপুটের দেখা পাননি। অর্থাৎ সবটাই ওই ব্যক্তির মনের কল্পনা। বা বলা ভালো দৃষ্টিভ্রম। বেশ কয়েক বছর এমন চলার পর সম্প্রতি মনোবিদের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ব্যক্তির পরিবার। আর তারপরেই ধরা পড়েছে প্রকৃত কারণ। আসলে এটা একধরণের মানসিক রোগ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। আর এই রোগের নাম ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম’। লুইস ক্যারলের উপন্যাসের সঙ্গে মিলিয়েই নাম রাখা হয়েছে রোগের। আর এতে আক্রান্তরা নানা ধরণের আজগুবি প্রাণী দেখতে পান চোখের সামনে। তবে বাস্তবে যেমন লিলিপুটের অস্তিত্ব নেই, তেমনই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও খুবই কম। চিকিৎসকদের মতে, হয়তো কোটিতে একজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।
যেহেতু আজ অবধি খুবই কম মানুষ বিরল এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাই রোগটির প্রকৃত কারণ এখনও চিকিৎসকদের অজানা। তবে হেরোইন, ব্রাউনসুগার বা এই ধরণের কোনো নেশায় দীর্ঘদিন আসক্ত থাকার কারণেই এমন দৃষ্টিভ্রম হয় বলে মনে করতেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পুনের এই ব্যক্তি কখনও কোনো নেশায় আসক্ত ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। ফলে চিকিৎসকরাও কিছুটা চিন্তিত পুরো বিষয়টা নিয়ে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, নেশায় আসক্ত না হলেও কোনো দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ থেকে দৃষ্টিভ্রম শুরু হতে পারে। পরে সেটাই আরও ব্যাপক আকার নিতে পারে। অন্তত এটি যে ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম’, তাতে সন্দেহ নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এই রোগের কারণে বাড়ি থেকে বেরনোই কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই ব্যক্তির। সারাদিনে যে কোনো সময় শুরু হতে পারে তাঁর ভুল দেখা। সাধারণত দিনে দুবার করে এমন ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মীয়রা। হঠাৎ করে চিৎকার করে ওঠেন তিনি। আর তারপরেই শুরু হয় প্রলাপ। তাঁকে কোন অস্ত্র দিয়ে কোনদিন থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে, সবই ধারাভাষ্যের মতো বলতে থাকেন তিনি। এই সময় তাঁকে শান্ত করা একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়েন। এবং ঘুম থেকে উঠে তাঁর কিছুই মনে থাকে না। একটি শিশুপাঠ্য উপন্যাসের মধ্যেই যে এমন এক ভয়ঙ্কর রোগের বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে, সে-কথা ভাবলে সত্যি অবাক লাগে।
আরও পড়ুন
স্বর্ণপদক ভাগ করে নিলেন দুই প্রতিযোগী, বিরল বন্ধুত্বের সাক্ষী অলিম্পিকের মঞ্চ
Powered by Froala Editor