অবিরাম গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি হেলিকপ্টার। এবার যদি সেখান থেকে অপ্রসারণশীল তারের মাধ্যমে কোনো ভরকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেই ঝুলন্ত তারটির আকার কেমন হবে? উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বায়ুর ঘর্ষণ এড়িয়ে গেলে চলবে না। ২০১৪ সাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিক্স অলিম্পিয়াড পরীক্ষায় রীতিমতো পরীক্ষার্থীদের ঘুম উড়িয়েছিল এই প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ঠিক কী— তা নিয়েও হয়েছিল দীর্ঘ বিতর্ক। এবার এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে অভিনব কাণ্ড ঘটালেন অস্ট্রেলিয়ান-কানাডিয়ান ব্যক্তি। পরীক্ষালব্ধ ফল পাওয়ার জন্য সত্যি সত্যিই ভাড়া করে বসলেন আস্ত হেলিকপ্টার (Chopper)!
ডেরেক মুলার (Derek Muller)। কানাডার এই খ্যাতনামা ইউটিউবারই এবার পরীক্ষালব্ধ ফলের মাধ্যমে রেশ টানলেন বিগত ৭ বছর ধরে চলে আসা বিতর্কের। তবে এই পরীক্ষা নিছকই খামখেয়ালিপনা নয়। ২০১৪ সালের সেই প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সমাধানের সন্ধানে নেমেছিলেন ডেরেক। তাত্ত্বিক ও গাণিতিকভাবে উত্তর সামনে এলেও, সেখানে থেকে যাচ্ছিল বেশ কিছু ধোঁয়াশা। শেষ পর্যন্ত তাই বাস্তব পরীক্ষার পথই বেছে নেন তিনি।
কয়েকদিন আগের কথা। পরীক্ষার জন্য আস্ত একটি চপার ভাড়া করে ফেলেন ডেরেক। তারপর সেখান থেকে মোটা দড়ির মাধ্যমে ঝুলিয়ে দেন ২০ পাউন্ডের একটি কেটলবল। গোটা দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেন বিভিন্ন দিক থেকে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেন ডেরেক। সম্প্রতি তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ‘ভেরিটাসিয়াম’-এ প্রকাশিত হয়েছে রেকর্ড করা সেই দৃশ্য।
না, কোনো নির্দিষ্ট একটি সমাধান নয়। ডেরেকের পরীক্ষায় উঠে আসে, ঝুলন্ত পদার্থের ভরের ওপর নির্ভর করেই বদলে যায় তারের আকারও। ডেরেকের করা এই পরীক্ষা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। বিমোহিত নেটিজেনরাও।
আরও পড়ুন
ব্ল্যাকহোলের গ্রাসে নক্ষত্রও! খুলল পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত
তবে বিজ্ঞানের প্রতি ডেরেকের এই কৌতূহল বা আকর্ষণ নতুন কিছু নয়। ডেরেক নিজেও পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র। ২০০৪ সালে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকতা করেন ডেরেক। ২০০৮ সালে পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পর যোগ দেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে রুটিনে বাঁধা জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। ২০১১ সালে সেই কাজ ছেড়ে, ‘ফুল-টাইম ইউটিউবার’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন ডেরেক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা কমেনি এত বছর পরেও।
আরও পড়ুন
নোবেলজয়ী পদার্থবিদদের এক-চতুর্থাংশই ‘শরণার্থী’!
এই প্রথম নয়। আর্কিমিডিস থেকে শুরু করে আইনস্টাইন— অজানা সমস্যার সমাধান পেতে এর আগেও অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটিয়েছেন বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা। সেই কিংবদন্তির তালিকা বেশ দীর্ঘ। ডেরেকের হাত ধরে আরও একবার পুনরাবৃত্তি হল সেই বিজ্ঞান-মাদকতার। পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ-সিদ্ধান্ত। এই শব্দত্রয়ই বিজ্ঞানের শেষ কথা, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন ডেরেক মুলার…
আরও পড়ুন
স্টিফেন হকিং-এর কাছে তিনি ‘গ্রেটেস্ট’, বিস্মৃতির অতলে বাঙালি পদার্থবিদ জে এন ইসলাম
Powered by Froala Editor