গুহার মধ্যে ঢুকেই শঙ্কর টর্চের আলোয় দেখতে পেল একটা কাঠের পিপে, পাশে একটা কঙ্কাল। আর তার সামনেই পড়ে আছে বোতলবন্দি চিঠি। সেই চিঠি থেকেই শঙ্কর জানতে পারল ওই ব্যক্তির নাম আত্তিলিও গাত্তি। ১৮৮০ সালের লেখা সেই চিঠি থেকেই শঙ্কর সন্ধান পেয়েছিল এক হিরের খনির। সেই চিঠি লেখার প্রায় তিরিশ বছর পরে। মনে পড়ছে চাঁদের পাহাড়ের সেই গল্প?
তবে বিভূতিভূষণের লেখা নয়। এবার বাস্তবেই ঘটে গেল এমন ঘটনা। আর ঘটনাস্থল কোনো গুহাও নয়, নদী। ব্র্যাড ওয়াচস্মাথ নামের এক ব্যক্তি নদীতে ভেসে যাওয়া এমনই একটি বোতলবন্দি চিঠি খুঁজে পেলেন। কয়েকদিন আগেই ওই অঞ্চলে হানা দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ইসাইয়াস। প্রথমে ব্র্যাড ভেবেছিলেন ঝড়ের কারণেই অনেক আবর্জনার মতো এই বোতলটিও ভেসে যাচ্ছে ব্রডকিল নদীতে।
সাধারণত নদীতে কোনো আবর্জনা দেখলে, তা তুলে ফেলেন ব্র্যাড। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বোতলটি তুলতে গিয়েই ব্র্যাড এবং তাঁর বন্ধু লক্ষ্য করেন বোতলের ভিতরে রয়েছে একটি কাগজ। এক টুকরো চিঠি। খুলেই চমকে ওঠেন তাঁরা। চিঠির তারিখ ১ অগস্ট, ১৯৮৫। অর্থাৎ ঠিক ৩৫ বছর আগে লেখা হয়েছিল এই চিঠি। চিঠিটি লিখেছেন ক্যাথি রিডল এবং তাঁর বোন স্টেসি ওয়েলস।
তবে এই চিঠিতে কোনো গুপ্তধন কিংবা মণিমাণিক্যের হদিশ ছিল না। ছিল শৈশবের কিছু খুচরো মুহূর্ত, কৌতুক আর সরলতার ছাপ। ক্যাথি এবং স্টেসি সেই চিঠিতে বর্ণনা করেছেন তাঁদের পোষ্যকে নিয়ে। লিখেছেন শৈশবের নানা ঘটনার কথা। পাঠককে জিজ্ঞেস করেছেন তাঁদের এই ধরণের কোনো স্মৃতিমেদুরতা রয়ে গেছে কিনা, সে ব্যাপারে।
আরও পড়ুন
কবিতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সংকেত, অবশেষে উদ্ধার ফরেস্ট ফেনের গুপ্তধন
ব্র্যাড চিঠিটি নিয়ে যান মিলটন হিস্টোরিকাল সোসাইটিতে। সেখান থেকেই খোঁজ মেলে ওই পরিবারের। জানা যায় মিলটনের কয়েক মাইলের মধ্যেই বসবাস করেন ক্যাথি রিডল। ৩৫ বছর আগের লেখা চিঠি নিয়ে দুই আগন্তুককে দেখে কার্যত অবাক হয়ে যান ক্যাথি। সাড়ে তিন দশক ধরে এই চিঠি নদীর জোয়ার, ঝড়-ঝাপ্টা সামলেও কীভাবে টিকে গেছে এতগুলো বছর, তা ভেবেই বিস্মিত হন তিনি। তাঁর পরিভাষায়, ‘এই চিঠির ভবিতব্যই ছিল হয়তো ফিরে আসা...’
ক্যাথি জানান, অল্প বয়সে বোনের সঙ্গে সমুদ্রতটে ঘুরতে গিয়ে এই পরিকল্পনা মাথায় এসেছিল তাঁর। সেখানেই চিঠি লিখে বোতলে করে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। দেখতে চেয়েছিলেন এই চিঠি কতদূর অবধি যায়। কালের অবহে সে কথা একপ্রকার ভুলতে বসেছিলেন ক্যাথি। তবে প্রমাণ পেলেন ৩৫ বছরেও খুব বেশি দূরে যায়নি সে। কিংবা হয়তো পৃথিবীকে ঘুরে আবার ফিরে এসেছে তাঁর লেখিকার কাছে।
আরও পড়ুন
নির্জন দ্বীপে আজও লুকিয়ে সেই গুপ্তধন, যা দিয়ে কিনে ফেলা যায় গোটা পৃথিবী!
গুপ্তধনের সন্ধান না পেলেও এমন ঘটনায় উচ্ছ্বসিত ব্র্যাড এবং তাঁর বন্ধু। চির-উৎসুক শঙ্কর হিরের খনির সন্ধান পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আত্তিলিও গাত্তির সঙ্গে মোলাকাতের সুযোগ তার হাতছাড়া হয়েছিল। তবে সেই স্বাদ অপূর্ণ থাকল না ব্র্যাডের...
Powered by Froala Editor